তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা

তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা
তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন রচনা

ভূমিকা

একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার মাধ্যমগুলি হল-পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজ। এই মাধ্যমগুলির প্রয়োজন মানুষের জীবনে অন্ধকার দূর করে আলোর আনয়নের জন্য তথা জীবনচর্যাকে সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক করে তোলার কারণে। জগৎ ও জীবনকে জানতে হলে শিক্ষার যেমন কোনো বিকল্প নেই তেমনি শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে বিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই যে কোনো শিক্ষার্থীর কাছে বিদ্যালয় জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন একাধারে জ্ঞান অর্জন, অভিজ্ঞতা আহরণ ও আনন্দের দিন-তা চিরদিন আমার স্মৃতিপটে অম্লান থাকবে।

প্রেক্ষাপট

বিদ্যালয়ের প্রথম দিন অন্যান্য ঘটনার প্রথম দিনের থেকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির সালতামামি করতে করতে বারবারই তা স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে। কেননা জ্ঞান হওয়ার পর মা-কে জিজ্ঞাসা করতাম-মা, কবে স্কুলে যাব? মা বলতেন, বড় হলে যাবি। মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করতাম-এই তো বড় হয়েছি, আর বড়ো হবো কবে। মা বলতেন, যখন বড়ো হবি, তখন ঠিক তোকে বলে দেব। তাই স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে তীব্র আগ্রহ মনে মনে সঞ্চিত হয়ে ছিলই, তার উপর দাদা-দিদিরা স্কুলে যাচ্ছে, আমি যেতে পারছি না-এই অভিমানও ছিল। তারপরেই সেই বাঞ্ছিত দিন এসে গেল এবং আমার আবেগ ও উল্লাস বাস্তবায়িত হওয়ার পথ পেল।

বিবরণ

দিনটা বেশ মনে আছে-১১ই জানুয়ারি, সোমবার। তখন সবে চার গিয়ে পাঁচে পড়েছি। আমি বিদ্যালয়ে প্রথম যাব, তাই আনন্দে তাড়াতাড়ি প্রাত্যহিক সব কাজ সেরে স্কুলের পোশাক পরে বেরিয়ে পড়লাম। বাবার হাত ধরে স্কুলের প্রধান তোরণের সামনে এসে প্রচুর ছাত্রছাত্রীদের দেখে ভয় পেয়ে যাই এবং পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখে আমার বুক দুরুদুরু করতে থাকে। কারণ একসঙ্গে এত ছেলেমেয়ের সমাগম ও তাদের কৌতূহলী দৃষ্টি আমি কোনোদিন দেখিনি। তারপর বাবা আমার হাত ধরে একটি ঘরে চেয়ারে উপবিষ্ট একজন সৌম্য, শান্ত, ভদ্রমানুষের সামনে নিয়ে গেলেন। প্রথমে তাঁকে দেখে ভয় হলেও পরে তাঁর স্নেহের আকর্ষণে বাঁধা পড়লাম। বাবা তাঁকে প্রণাম করতে বললেন। আমি তাঁকে প্রণাম করলে, তিনি তাঁর স্নেহগম্ভীর কণ্ঠে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন ও আমাকে কাছে টেনে নিয়ে একটি পেন হাতে তুলে দিলেন। বাবা বললেন, ইনি তোমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, উনি ও আমি একই স্কুলে পড়াশোনা করেছি, উনি তোমার বাবার মতোই, উনাকে শ্রদ্ধা করবে, উনি হলেন তোমার শিক্ষাগুরু। তারপর প্রধান শিক্ষক মহাশয় আমাকে একজন পিয়নের সঙ্গে ক্লাসে পাঠিয়ে দিলেন। কত অজানা ভয় মনে-না জানি স্কুলে কি-না হবে।

অভিজ্ঞতা

ক্লাসে গিয়ে দেখলাম, আমার মতো প্রায় সকলেই মনে ভয় নিয়ে বেঞ্চে বসে আছে-সব নতুন নতুন মনে হচ্ছে। সামনের বেঞ্চে আমারই মতো একজন আমাকে তার কাছে জায়গা করে দিল। বসে পড়লাম ও তার নাম ও বাড়ি জিজ্ঞাসা করায় সে বলল, আমি তোকে চিনি, তোর বাবা তো শিক্ষক, তাই না? শুনে আশ্বস্ত হলাম-যাক্ একজন পরিচিত তো পাওয়া গেল। এমন ভাবছি, সেইসময় ক্লাস টিচার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। সব ছাত্রছাত্রীদের মতো আমিও উঠে দাঁড়ালাম। তিনি হাসিমুখে সবাইকে বসতে বললেন ও আমরাও বসে পড়লাম। পরে তিনি একের পর এক আমাদের নাম ধরে ডেকে পরিচয় পর্ব সেরে নিলেন ও বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলার কথা বারবার জনালেন-যাতে আমরা যথারীতি শৃঙ্খলাপরায়ণ হই। জোর দিলেন নিয়মানুবর্তিতা ও নিষ্ঠার উপর। বিদ্যালয়ের যাঁরা কৃতী ছাত্র দেশে বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তাঁদের কথা বলে তিনি আমাদের প্রেরণা যোগালেন। আমিও শুনে খুব উদ্দীপিত বোধ করলাম, মনে মনে ভাবলাম আমিও যেন বিদ্যালয়ের সেই সুনাম ধরে রাখতে পারি। শিক্ষক মশাই আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন আমরা নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন প্রভৃতি জানি কি না। আমি বাবার কাছে আবৃত্তি শিখেছিলাম। সাহস করে তাঁর নির্দেশে ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতাটি আবৃত্তি করলাম। তারপর ঘণ্টা বাজল, ক্লাস টিচার চলে গেলেন। এভাবে পরপর চার পিরিয়ড ক্লাস হল এবং তারপর আমাদের ক্লাস ছুটি হয়ে গেল।

উপসংহার

ছুটির ঘণ্টার পর আমরা প্রত্যেকে বই-খাতা ও ব্যাগ গুছিয়ে আনন্দে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। স্মৃতি হয়ে থাকল কিছু চাওয়া, কিছু পাওয়া ও অনন্ত তৃপ্তি। কারণ আমার স্বপ্নই ছিল বড়ো হলে আমি অন্যদের মতো স্কুলে যাব এবং শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে যথার্থ মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করব।

Leave a Comment