দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক – দলিত মতাদর্শ ও অধিকার নিয়ে ভারতীয় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ গান্ধীজী এবং দলিত আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রামী নেতা ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ড. বি. আর. আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক পড়ে নেওয়া যাক।

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক
দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতের অনুন্নত শ্রেণির মানুষদের বিরুদ্ধে অনাচার, বিভিন্ন মানবিক অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা বা অস্পৃশ্যতা দেশের সব মানুষ মেনে নিতে পারে নি। এর বিরুদ্ধে বারংবার প্রতিবাদ উঠেছে এবং ১৮৮০ থেকে ১৮৯০-এর মধ্যে বেশ কিছু সমাজ সংস্কারক গোষ্ঠী অস্পৃশ্যতা মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে এগিয়ে এসেছে।

দলিত মতাদর্শ ও অধিকার নিয়ে ভারতীয় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ গান্ধীজী এবং দলিত আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রামী নেতা ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ড. বি. আর. আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

ড. আম্বেদকর নিজে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এবং নানাভাবে অনাচারের শিকার। তিনি দলিত সম্প্রদায়কে পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, হিন্দুসমাজে প্রচলিত বর্ণাশ্রম প্রথাই দলিত সমাজের ওপর সকল অনাচার ও অস্পৃশ্যতার কারণ। এই ব্যবস্থাই সমাজকে দুর্বল করে, পঙ্গু করে এবং মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। অপরপক্ষে, গান্ধীজী ছিলেন বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার সমর্থক এবং প্রবল অস্পৃশ্যতা বিরোধী। তাঁর কাছে দলিতরা ছিল ‘হরিজন’ বা ঈশ্বরের সন্তান। তিনিও দলিত সম্প্রদায়কে পূর্ণ অধিকারে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই জাতীয় কংগ্রেস প্রথম দলিত সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হয়। তিনি চাইতেন বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রেখে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও দলিত সম্প্রদায়ের কল্যাণ। ১৯৩১ সালের ১৪ আগস্ট, গান্ধী-আম্বেদকর সাক্ষাৎকালকালে ড. আম্বেদকর তাঁকে বলেন- “আমার বিশ্বাস, অস্পৃশ্যতা বর্ণাশ্রম ধর্মে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। যতদিন বর্ণাশ্রম থাকবে ততদিন হিন্দুধর্মে অস্পৃশ্যতা থাকবে। আপনি বর্ণাশ্রম চান; অথচ অস্পৃশ্য চান না, এটা একটা অবাস্তব কথা।”

অনুন্নত সম্প্রদায়কে জাতীয় আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বিট্রিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’-র নীতি ঘোষণা করেন (আগস্ট, ১৯৩২ খ্রিঃ)। এর দ্বারা অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাব কার্যকরী হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি হত এবং অনুন্নত সম্প্রদায় বর্ণহিন্দুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। গান্ধীজী এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন এবং এর প্রতিবাদে ২০শে সেপ্টেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন। এ সময় তফশিলি নেতা ড. আম্বেদকর তাঁর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন এবং ২৫শে সেপ্টেম্বর পুণা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর দ্বারা হিন্দুদের ক্ষেত্রে যৌথ নির্বাচনের নীতি স্বীকৃতি হয় এবং সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে প্রাপ্ত আসনের দ্বিগুণ আসন তফশিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত করা হয়।

আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment