দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তন

ভূমিকা

যুদ্ধ ও যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দিক নির্দেশ করেছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এই পরিবর্তন ছিল ব্যাপকতর। বিভিন্ন ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার বা স্বয়ংচালিত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের যুদ্ধ বিমানের ব্যবহারের পাশাপাশি রাডার-এর ব্যবহারও হয়েছিল। অর্থাৎ এককথায় বলা যায় যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তন হল যুদ্ধাস্ত্রের কার্যকারিতা, অর্থাৎ তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা।

যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত পরিবর্তন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাস্ত্রগুলি হল-

রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র: রাসায়নিক যুদ্ধাস্ত্র হল এক ধরনের গণহত্যা বা গণসংহারমূলক যুদ্ধাস্ত্র। এধরনের যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ ব্যয়বহুল হলেও তৈরি পদ্ধতি সহজ এবং এগুলি হল বিষাক্ত গ্যাস বা ক্ষতিকর তরল বা পাউডার। এগুলি মানবশরীরের পক্ষে ছিল খুবই ক্ষতিকর।

বীজাণু যুদ্ধাস্ত্র : প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে বীজাণু যুদ্ধাস্ত্রের (যেমন : ছোঁয়াচে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, টক্সিন প্রভৃতি) আবিষ্কার ও ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে এগুলি আরও উন্নত হয়েছিল এবং এগুলি প্রয়োগ করে ব্যাপক এলাকার শত্রুপক্ষের জনগণের মোকাবিলা করা ছিল খুব সহজ।

গ্যাস চেম্বার: বন্ধ কক্ষে হাইড্রোজেন সায়ানাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি শ্বাসরোধকারী (অ্যাম্ফিকসিয়ান্ট) গ্যাসের সাহায্যে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের হত্যার পদ্ধতি গ্যাসচেম্বার নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে নাতসি জার্মানিতে শত্রুপক্ষের বন্দিদের হত্যার জন্য নিউগুয়েমা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, অসচিউইটস ক্যাম্প, ম্যাজডানেক ক্যাম্প নামক গ্যাস চেম্বার ব্যবহার করা হয়েছিল।

পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে পারমাণবিক বিস্ফোরক ও ভীষণ তাপ বা পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণযুক্ত পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে ব্যাপক মাত্রায় গণসংহারের উপায় আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত হয়েছিল। এরূপ গণসংহারের প্রথম দৃষ্টান্ত হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জাপানের দুই শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ। এ ছাড়া এই যুদ্ধে শেষ পর্বে সার্ভো নিয়ন্ত্রিত কামান সজ্জা, নির্দিষ্টমুখী এবং গৃহমুখী ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করা হয়।

ট্রানজিস্টারের প্রবর্তন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেডিয়ো আর ইলেকট্রনিক গবেষণা পদ্ধতির দ্রুত বিকাশ ঘটে। হালকা, সহজে ব্যবহার করা যায় এমন সরঞ্জামের চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে যন্ত্রাংশ নির্মাণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। ফলে পলকা ভাল্ল্ভের ঘাতসহ প্রবর্তন ঘটে ট্রানজিস্টারের।

রকেট ব্যবহার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আকাশযানের ব্যবহার বহুগুণ বাড়ে। শত্রুপক্ষকে আক্রমণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আকাশযান এক নতুন ঐতিহ্যের সূচনা ঘটায়। আকাশযানের ব্যাপক আক্রমণের ফলে চিরাচরিত আক্রমণ রীতি একেবারে ভেঙে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে সোভিয়েত রাশিয়া ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক হারে এই রকেট ব্যবহার করতে থাকে।

উপসংহার

এভাবে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুদ্ধাস্ত্রের প্রকৌশলগত উন্নতি ও যুদ্ধক্ষেত্রে তার ব্যবহার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ধ্বংস ও গণসংহার করেছিল।

Leave a Comment