দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল কেন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল কেন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল কেন?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভাবা হয়েছে যে, এরপর বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ফিরে আসবে এবং শান্তির স্বার্থেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। সেই ভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু গণতন্ত্র ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিপর্যয়

গণতন্ত্রের মড়ক : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপের বহু দেশে ‘গণতন্ত্রের মড়ক’ দেখা দেয়। বহু দলীয় গণতন্ত্র অচল হয়ে যায়। সোভিয়েত রাশিয়ায় বলশেভিক দলের একদলীয় শাসন এবং ইটালি ও জার্মানিতে একনায়কতন্ত্রী শাসন বলবৎ হয়।

গণতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা :
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে যে যে ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় (যেমন: খাদ্য সংকট, বিশ্বব্যাপী মহামন্দা, বেকার সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি) তার মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক সরকারগুলির ব্যর্থতার ফলশ্রুতিতে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিপর্যয় দেখা দেয়।

গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অভাব: ইংল্যান্ড ও অপর কয়েকটি দেশ ছাড়াও সমকালীন ইউরোপের অন্যত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অভাবের ফলে সেইসব দেশে গণতন্ত্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল।

দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতার অভাব: সমকালীন ইউরোপের রাষ্ট্রনায়করা ফ্যাসিবাদ নাতসিবাদের বিপদকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের চরিত্র না বুঝে তাকে পাশ্চাত্য সভ্যতার শত্রু মনে করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত।

অর্থনৈতিক মহামন্দার আঘাত: এরপর নেমে এল অর্থনৈতিক সংকট। বিশ্বব্যাপী মহামন্দার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আর্থসামাজিক সংকট দেখা দেয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা হারায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান ও বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য লিগ অফ্ নেশনস্ বা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় এই সংস্থার ব্যর্থতার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের সামনে বিপদ নেমে আসে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

Leave a Comment