![]() |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণ গুলি কী ছিল |
অক্ষশক্তির পরাজয়ের কারণ
স্বদেশেই জনসমর্থনের অভাব: অক্ষশক্তির কর্ণধারেরা নিজ নিজ দেশেই জনপ্রিয় ছিলেন না। যুদ্ধজনিত কারণে অর্থসম্পদ ও মানব সম্পদের অপূরনীয় ক্ষতি দেশবাসী মেনে নিতে পারেননি। জার্মানি ও ইটালিতে নাতসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। হিটলারকে তাঁর নিজের দেশেই বারবার মৃত্যুর মুখোমুখী পড়তে হয়েছে। মুসোলিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশবাসীর হাতেই নিহত হন।
বিশ্বজনমত আদায়ে ব্যর্থতা: অক্ষশক্তির ক্ষুব্ধ অভিযানের পেছনে ছিল আগ্রাসী মনোভাব। আর মিত্রশক্তির লক্ষ্য ছিল বিশ্বে গণতন্ত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। তাই অক্ষশক্তির পররাজ্য গ্রাস নীতির প্রতি। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের সমর্থন ছিল না। বিশ্ব সহানুভূতি আদায়ে ব্যর্থতা অক্ষশক্তির একটি বড়ো দুর্বলতা ছিল।
আমেরিকার যোগদান: বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে আমেরিকা যুদ্ধে যোগ না দিলেও নানা ভাবে মিত্র জোটকে সাহায্য করে আসছিল। পার্ল হারবার সংক্রান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে আমেরিকা অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে এবং মিত্রপক্ষের পক্ষে যোগ দিলে এই জোটের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং অক্ষশক্তি পিছু হঠতে থাকে।
অক্ষশক্তির দুর্বলতা: যুদ্ধের শুরুতেই অক্ষশক্তির দুর্বলতা ধরা পড়ে। অক্ষশক্তি জোটের মধ্যে ইটালি ছিল সবচেয়ে দুর্বল। তাই ইটালি জার্মানিকে সহযোগিতার বদলে জার্মানির কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মিত্রশক্তির সম্মিলিত লোকবল ও অর্থবলের কাছে জার্মানির একক উদ্যম ও অর্থবল খুবই নগণ্য ছিল।
সমন্বয়ের অভাব : অক্ষ শক্তিভুক্ত দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় সাড়ে আটমাস পরে ইটালি জার্মানির পক্ষে যোগ দেয়। আবার ইউরোপের প্রতি জাপানের কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই জার্মানি সহযোগীদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পায়নি।
কৌশলগত ত্রুটি: মিত্রশক্তির উন্নত রণপরিকল্পনার কাছে অক্ষশক্তির যুদ্ধাস্ত্রের কৌশলগত ত্রুটি অক্ষশক্তির পরাজয়ের অপর একটি কারণ। জার্মানির পরমাণু বোমার অসম্পূর্ণতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্যে অক্ষশক্তির ব্যর্থতাকে ঠেকানো যায়নি। উপরন্তু Naval Air Force ও জেট রকেট তৈরির ক্ষেত্রে হিটলারের অনীহার কারণে জার্মানি বিধ্বংসী বোমারু বিমান আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেননি।
দ্বিতীয় রণাঙ্গন জনিত সমস্যা: ৬ জুন ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ফ্রান্সের নরমান্ডি উপকূলে মিত্রপক্ষের দ্বিতীয় রণাঙ্গন খুললে জার্মানি মিত্রশক্তির সাঁড়াশি আক্রমণের চাপে অসহায় হয়ে পড়ে। আক্রমণাত্মক যুদ্ধে দক্ষ জার্মানি রক্ষণাত্মক যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয় এবং নিজের পতন ডেকে আনে।
রাশিয়ায় হিটলারের ব্যর্থতা: রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতা ছিল জার্মানির শেষের শুরু (Beginning of the end) | হিটলার খুব কম সময়ে দ্রুত গতিতে রাশিয়া অভিযান সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পোড়ামাটি নীতি ও রুশ গেরিলা আক্রমণে হিটলারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। সর্বশক্তি নিয়োগ করেও তিনি শেষ রক্ষা করতে পারেননি। পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ শেষ না করেই তিনি পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। একই সঙ্গে দুই রণাঙ্গনে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে তিনি অক্ষশক্তির বিপর্যয় ডেকে আনেন।
আদর্শগত সংঘাত: অক্ষশক্তি একনায়তন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্যবাদ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার খেলায় মেতেছিলেন। কিন্তু মিত্রশক্তি বিশ্বের গণতন্ত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধে নেমেছিল। এই আদর্শগত সংখ্যা অক্ষশক্তি বিশ্ববাসীর সহানুভূতি হারায়। এটাই ছিল তাদের মস্ত বড়ো দুর্বলতা।
হিটলারের চরিত্র: হিটলার ছিলেন অহংকারী, সবজান্তা, সন্দেহপ্রবণ, উদ্ধত স্বৈরাচারী প্রকৃতির মানুষ। তিনি অভিজ্ঞ সেনানায়ক ও পদস্থ কর্মচারীদের যোগ্য মর্যাদা দিতেন না। তিনি অভিজ্ঞ সেনাপতিদের পরামর্শকে গুরুত্বই দিতেন না। উপরন্তু নিজের সিদ্ধান্তকেই তাঁদের ওপর চাপিয়ে দিতেন। ফলে প্রশাসন ও সেনাদলের আস্থা অর্জনে তিনি ব্যর্থ হন। হিটলারের এই একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণেই অক্ষশক্তি ব্যর্থ হয়েছে।