দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরাজনীতি ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থান, দূরপ্রাচ্যে জাপানের শক্তিবৃদ্ধি, নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত করে তোলে।
সুস্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী। Prayaswb-এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আপনাদের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি নিয়ে আলোচনা করবো।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি পড়ে নেওয়া যাক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি
![]() |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ
নিরপেক্ষতার নীতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরাজনীতি ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থান, দূরপ্রাচ্যে জাপানের শক্তিবৃদ্ধি, নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত করে তোলে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুজভেল্ট নিরপেক্ষতার নীতি বর্জন করে বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগদানের পক্ষপাতী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম ছাব্বিশ মাস আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে, যদিও আমেরিকাবাসীর সহানুভূতি ছিল মিত্রপক্ষীয় রাষ্ট্রগুলির দিকে। এই কারণে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে আমেরিকা পশ্চিমি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সাহায্যের উদ্দেশ্যে তাদের কাছে অস্ত্র ও অন্যান্য সমরোপকরণ বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই নীতি ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ বা অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের নীতি নামে অভিহিত। এর ফলে মিত্র শক্তিজোট যথেষ্ট উপকৃত হয়েছিল।
নিরপেক্ষতা থেকে বিচ্যুতি
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ফ্রান্সের পতন, ইংল্যান্ডের উপর জার্মানির ব্যাপক বিমান আক্রমণ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধের সম্প্রসারণ আমেরিকাকে সচকিত করে তোলে। মার্কিনিরা মনে করে যে, এরপর হিটলার আমেরিকার দিকে অগ্রসর হবেন। সুতরাং ফ্যাসিবাদী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অস্ত্রসজ্জা ছাড়া আমেরিকার উপায় ছিল না। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কংগ্রেস ও জনসাধারণের সহযোগিতা লাভ করার জন্য রুজভেল্ট রিপাবলিকান দলের দু’জন সদস্যকে মন্ত্রিসভায় গ্রহণ করেন। ওই সময় আমেরিকায় ২১ থেকে ৩১ বছর বয়স্ক সকল নাগরিকের বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা চালু হয়। আমেরিকা মহাদেশে নাৎসি পঞ্চম বাহিনীর কার্যকলাপ বন্ধ করা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কানাডা-র সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে যুক্ত-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রিটেনের কাছ থেকে বারমুডা ও নিউফাউন্ডল্যান্ড নিয়ে আমেরিকা সেখানে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে। এইভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে আসছিল।
অঘোষিত যুদ্ধ
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে মার্কিন সেনেট ‘লেন্ড-লিজ আইন’ পাস করে মিত্রশক্তিবর্গকে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে আমেরিকা ‘গণতন্ত্রের অস্ত্রাগারে পরিণত হয়। মিত্রপক্ষকে অস্ত্র সাহায্য করার ফলে জার্মানি, জাপান ও অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। ইতিমধ্যে আমেরিকার বাণিজ্য জাহাজগুলি জার্মান সাবমেরিন কর্তৃক ক্রমাগত আক্রান্ত হতে থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুদ্ধ হয় এবং জার্মান সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজগুলিকে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দেয়। মার্কিন নৌশক্তিকে জোরদার করার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। এইভাবে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে জার্মানি ও আমেরিকার মধ্যে একটি অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।
যুদ্ধে আমেরিকার যোগদান
এই সময় এশীয় শক্তি জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দূরপ্রাচ্যে প্রাধান্য বিস্তারে অগ্রসর হতে থাকলে মার্কিন স্বার্থ বিপন্ন হয়। এ ব্যাপারে বোঝাপড়ার জন্য মার্কিন উদ্যোগে ওয়াশিংটনে জাপান ও আমেরিকার বৈঠক বসে। বৈঠক চলাকালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল হারবার-এ জাপান আক্রমণ হানে (১৯৪১, ৭ ডিসেম্বর)। এর ফলে ৮ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার নীতি ত্যাগ করে সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে। আমেরিকার যোগদানে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়, মিত্রপক্ষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং তাদের জয় সহজতর হয়।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণ কি -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।