দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী বিদ্যুৎ গতিতে পোল্যান্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
সুস্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী। Prayaswb-এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আপনাদের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবো।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পড়ে নেওয়া যাক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
![]() |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
পোল্যান্ড দখল
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী বিদ্যুৎ গতিতে পোল্যান্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সূচনায় ইতালি নিরপেক্ষ ছিল। জার্মান বাহিনীর অগ্রগতি ও রণকৌশল সারা বিশ্বকে বিস্ময়-মুগ্ধ করে। জার্মানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১৭ই সেপ্টেম্বর রাশিয়া পূর্ব পোল্যান্ড আক্রমণ করে। এক মাসের মধ্যেই সমগ্র পোল্যান্ড অধিকৃত হয়। জার্মানি ও রাশিয়া যথাক্রমে পশ্চিম ও পূর্ব পোল্যান্ড নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি দখল
পোল্যান্ডের পতনের পর সম্ভাব্য জার্মান আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় রাশিয়া বাল্টিক অঞ্চলের এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া-য় নৌ ও বিমান ঘাঁটি স্থাপনের অধিকার আদায় করে। ফিনল্যান্ড এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে রাশিয়া ফিনল্যান্ড দখল করে (৩০শে নভেম্বর ১৯৩৯ খ্রিঃ)। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে রাশিয়া জাতিসঙ্ঘ ত্যাগ করে। এরপর রাশিয়া এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি দখল করে (জুন, ১৯৪০ খ্রিঃ)।
ডেনমার্ক ও নরওয়ের পতন
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে হিটলার ডেনমার্ক ও নরওয়ে আক্রমণ করেন। হিটলারের লক্ষ্য ছিল নরওয়ের লৌহ খনিগুলি দখল করে জার্মানির অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধি করা। ডেনমার্ক জার্মানির আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় এবং নরওয়ের রাজা ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ এই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে নি। এর ফলে দুই দেশেই মন্ত্রিসভার পতন ঘটে। ইংল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেনের পরিবর্তে রক্ষণশীল দলের নেতা উইনস্টন চার্চিল-এর নেতৃত্বে এক সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ফ্রান্সেও দালাদিয়েরের স্থলে পল রেনোঁ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও লুঝেমবার্গ বিজয়
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মে হিটলার একসঙ্গে বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গের উপর আক্রমণ হানেন। লুক্সেমবার্গের পতন ঘটে সহজেই। হাজার হাজার ছত্রীসেনা হল্যান্ড ছেয়ে ফেলে এবং জার্মান বিমান ও ট্যাঙ্কের আক্রমণে হল্যান্ডের পতন ঘটে। তীব্র প্রতিরোধের পর বেলজিয়াম পরাজয় বরণ করে।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২১শে নভেম্বর ফরাসিরা জার্মান প্রতিনিধিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সন্ধির শর্তানুসারে উত্তর ফ্রান্সের একটি বিরাট অংশ এবং পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি জার্মানির হাতে চলে যায়। এইভাবে ফ্রান্সের তিন-পঞ্চমাংশ স্থানে জার্মান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রান্সের বাকি অংশে মার্শাল পেঁতা-র নেতৃত্বে একটি জার্মান ক্রীড়নক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সরকারের রাজধানী ছিল ভিচি শহরে। তাই এই সরকার ‘ভিচি সরকার’ নামেও পরিচিত। লন্ডনে জেনারেল দ্য-গল-এর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন মুক্ত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইংল্যান্ড আক্রমণ
এরপর হিটলার ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২রা জুন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে এই আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ইংলিশ চ্যানেলের ফরাসি উপকূলে তেরো ডিভিশনের এক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। হিটলার এই ইংল্যান্ড অভিযানের নামকরণ করেন ‘সমুদ্র-সিংহ অভিযান’ (‘Operation Sea Lion’)। পরে ব্রিটিশ নৌ-বাহিনীর প্রতিরোধের ভয়ে হিটলার বিমান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জার্মান বিমান ইংল্যান্ডের উপর বোমাবর্ষণ করতে থাকে এবং ইংল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে জার্মান সেনা নামানোর চেষ্টা করা হয়। ক্রমশ এই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ১৫ই আগস্ট (১৯৪৩ খ্রিঃ) এক হাজার জার্মান বোমারু বিমান ইংল্যান্ডের উপর আক্রমণ চালায়। প্রথমদিকে বিপুল পরিমাণ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত ইংরেজ জনগণের প্রভূত ত্যাগের ফলে ইংল্যান্ড পরিস্থিতির যথাযোগ্য মোকাবিলা করে। ইংল্যান্ডের বিমান-বিধ্বংসী কামান ও জঙ্গি বিমানের পাল্টা আক্রমণে জার্মানির ২,৩৭৫টি বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ২৫শে আগষ্ট ব্রিটিশ বিমান বার্লিনের উপর আক্রমণ হানে। বিমান আক্রমণে ব্যর্থ হয়ে জার্মানি সমগ্র ইংল্যান্ডকে অবরোধের চেষ্টা করে, যাতে ইংল্যান্ড বিদেশ থেকে আমদানি করা খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী না পায়। এই উদ্দেশ্যে তারা ইংল্যান্ডের বন্দর ও পোতাশ্রয়গুলির উপর বোমাবর্ষণ করতে থাকে। আটলান্টিক মহাসাগরে জার্মান ডুবোজাহাজ ও চুম্বক মাইন ব্রিটিশ নৌবহরের ক্ষতিসাধন করে। ইংল্যান্ডও পাল্টা আক্রমণ হানে। একদিনে মাত্র ত্রিশটি বিমান হারিয়ে ব্রিটিশ বাহিনী ১৮৭টি জার্মান বিমান ধ্বংস করে। এই যুদ্ধ ‘ব্রিটেনের যুদ্ধ’ (‘Battle of Britain’) নামে পরিচিত। ইংল্যান্ড-জয়ে ব্যর্থ হয়ে জার্মানি এবার রাশিয়ার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।