পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর
পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2)

1. ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনাটি কার লেখা এবং এর মূলগ্রন্থ কী?

উত্তর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনাটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা। এর মূল গ্রন্থের নাম ‘পণ্যতন্ত্র’।

2. লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সুশীল পাঠক এবং সহদয়া পাঠিকার উদ্দেশে কী বলেছেন এবং কেন?

উত্তর লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সুশীল পাঠক এবং সহৃদয়া পাঠিকার উদ্দেশে বলেছেন যে, তিনি যদি রবীন্দ্রনাথকে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেন তাহলে তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁর অপরাধ নেবেন না।

কারণ লেখক ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছেন, তাই তিনি তাঁকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন এবং চিনেছেন।

3. ‘রবীন্দ্রনাথ এসব উত্তীর্ণ হয়ে অজরামর হয়ে রইবেন তাঁর গানের জন্য।’-কী উত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস, ছোটোগল্পের উচ্চতা, নাটকের মিস্টিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শব্দতত্ত্বের গবেষণা ও বিষয়পান্ডিত্য, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি অথবা শান্তিনিকেতন নির্মাণের বিশ্বজনীন ভালোবাসা এসব কিছুকেই তিনি উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন তাঁর সংগীতধারায়। উল্লিখিত বিষয়গুলির কথাই এখানে বলা হয়েছে।

4. রবীন্দ্রসংগীত সম্পর্কে কে বিচার করে গেছেন এবং কোন্ কোন্ দিক তুলে ধরেছেন?

উত্তর রবীন্দ্রসংগীত সম্পর্কে সৈয়দ মুজতবা আলীর অত্যন্ত সুহৃদ শান্তিদেব ঘোষ বিচার ও আলোচনা করে গেছেন।

শান্তিদেব ঘোষ মহাশয় রবীন্দ্রসংগীতের কোনো দিক বাদ দেননি। সুর, তাল, লয়, ভাষা, শব্দ, ধ্বনি, বাস্তবতা, তন্ময়তা সবদিক সম্পর্কে আলোচনা করে গেছেন।

5. সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে কীসের অনুসন্ধান করেছেন?

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে গীতিরসের অনুসন্ধান করেছেন। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কতকগুলি অপূর্ব গুণের সংমিশ্রণ ঘটেছে, তবেই এই ধরনের গান তিনি সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

6. সৈয়দ মুজতবা আলী কাদের গান বা কবিতার সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনা করেছেন?

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী বিশ্বখ্যাত শেলি, কীটস্, গ্যেটে, হাইনে, হাফিজ, আত্তার, কালিদাস, জয়দেব, গালিব, জওক্ প্রমুখ কবি বা গীতিকারের গান বা কবিতার সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনা করেছেন।

7. সৈয়দ মুজতবা আলী বিভিন্ন কবি বা গীতিকারের কবিতা বা গানের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের কোথায় পার্থক্য দেখিয়েছেন?

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী বিভিন্ন কবি বা গীতিকারের; যেমন-শেলি, কীটস্, গোটে, কালিদাস, জয়দেব, গালিব, জওক প্রমুখের কবিতা বা গান রসাস্বাদন করে ধন্য হয়েছেন ঠিকই কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের কাছে তিনি হার মেনেছেন। রবীন্দ্রসংগীতে যে অখণ্ডতা দেখেছেন তা হৃদয়মনকে অভিভূত করে ফেলে। এমনটি তিনি আর কোথাও দেখেননি।

৪. সৈয়দ মুজতবা আলী কোন কোন গানের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনা করা যায় বলে মনে করেন? কেন? 

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী জার্মানদের ‘লিডার’ সংগীত এবং ইরানীয়দের গজলের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনা করা যায় বলে মনে করেন।

কারণ তিনি লিডার বা গজলের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত জাতীয় কিঞ্চিৎ রস খুঁজে পেয়েছেন।

9. সৈয়দ মুজতবা আলীর অনুসরণে রবীন্দ্রসংগীতের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ রচনাটিতে রবীন্দ্রসংগীতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। যেমন-

১. রবীন্দ্রসংগীত অখণ্ড, সম্পূর্ণ। তাঁর গানের মধ্যে এক ধরনের অতৃপ্তিসুধা কাজ করে যা ব্যঞ্জনায় হৃদয়মন ভরিয়ে ফেলে।

২ রবীন্দ্রসংগীত যেমন মৃত্তিকার বন্ধন মেনে নীলাম্বরের মাঝে টেনে নিয়ে যেতে পারে তেমনি আবার সমুন্নতি থেকে নামিয়ে আনতে পারে মাটির কোমল স্পর্শে, যা অধিকতর মধুময়।

10. কার অলাভঙ্গির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গানের তুলনা করা হয়েছে? এবং কেন?

উত্তর স্বয়ং নটরাজের মূর্তির সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনা করা হয়েছে।

সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন, নটরাজের মূর্তি দেখে যেমন মনে হয় অন্য কোনো অঙ্গভঙ্গি দিয়ে নটরাজ যেমন তাঁর নৃত্যকে রূপ দিতে পারতেন না, তেমনই রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতিটি শব্দচয়ন তার ভাব, অর্থ, মাধুর্যকে রূপায়িত করেছেন যা অন্য কোনোভাবেই সম্ভব হত না।

11. অনেক গায়কের গলায় রবীন্দ্রসংগীতকে পানসে ফ্লাট মনে হয় কেন?

উত্তর চমৎকার সুর তাল জ্ঞান, মধুর কণ্ঠ থাকা সত্ত্বেও কোনো-কোনো গায়কের গলায় তা ফিকে পানসে বলে মনে হয়। কারণ সেইসব গায়কের ‘শব্দ’ সম্পর্কে বোধ অত্যন্ত কম। তাই প্রতিটি উচ্চারণের মধ্যে রসবোধ না থাকায় তা যেন নটরাজের প্রতিটি অঙ্গাভঙ্গিকে আড়ষ্টতা দান করে।

12. ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’ কাকে বলা হয়েছে কেন?

উত্তর রবীন্দ্রনাথকে ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’ বলা হয়েছে। কারণ তিনি মাত্র কয়েকটি শব্দ আর একটুখানি সুর দিয়ে যে অলৌকিক রসধারা বইয়ে দিয়েছেন, তা তাঁকে বিশ্বকর্মায় পরিণত করেছেন। তিনি কখনো দেবতাকে মানুষ করেছেন, আবার কখনো দেবতার চেয়ে মানুষকে মহত্তর করে তুলেছেন।

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 3)

“আমার কিছু ব্যক্তিগত বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ এসব উত্তীর্ণ হয়ে অজরামর হয়ে রইবেন তাঁর গানের জন্য।”-কথাগুলি কে বলেছেন? কীভাবে রবীন্দ্রনাথ অজরামর হয়ে থাকবেন?

উত্তর কথাগুলি ‘পণ্যতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধটিতে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী স্বয়ং বলেছেন।

লেখক মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সকল সৃষ্টির উপরে উঠে শুধুমাত্র গানের জন্যই অজরামর হয়ে থাকবেন। কারণ, রবীন্দ্রনাথের গানে তিনি খুঁজে পেয়েছেন এক অভূতপূর্ব গীতিরস। শেলি, কীটস্, গ্যেটে, কালিদাস, জয়দেব, গালিব প্রমুখের গান বা কবিতায় যতই তিনি ধন্য হয়ে যান, রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে বলেছেন- ‘

এমনটি আর পড়িল না চোখে,
আমার যেমন আছে।'

রবীন্দ্রসংগীতে রয়েছে এক অখণ্ড রূপ যা হৃদয়মনকে অভিভূত করে।

“তাই একমাত্র সেগুলোর সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের গানের তুলনা করে ঈষৎ বিশ্লেষণ করা যায়।”-‘সেগুলো’ বলতে কীসের কথা বলা হয়েছে? এই বিশ্লেষণের মধ্যে রবীন্দ্রগানের কোন্ রূপ ধরা পড়ে?

উত্তর ‘সেগুলো’ বলতে এখানে জার্মানদের ‘লিডার’ এবং ইরানিদের গজল গানের কথা বলা হয়েছে।

সৈয়দ মুজতবা আলী উল্লিখিত গানের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত জাতীয় কিঞ্চিৎ রস খুঁজে পেয়েছেন। তাই তিনি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেছেন, রবীন্দ্রনাথের গান অখণ্ড, পূর্ণ। কিন্তু লিডার বা গজল শুনে তাঁর মনে হয়েছে সেই গান যেন অসম্পূর্ণ, আরও কিছুক্ষণ হলে ভালো হত। তার মধ্যে রয়েছে অতৃপ্তি। কিন্তু রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে যে অতৃপ্তি তা হল ব্যঞ্জনার অতৃপ্তিতে হৃদয়মনকে ভরিয়ে তোলা। তার মধ্যে দিয়েই বারবার মনে তৈরি হয় সেই গান শোনার প্রতি তীব্র আসক্তি। আর এখানেই রবীন্দ্রসংগীতের সম্পূর্ণতা। রবীন্দ্রনাথের শব্দচয়ন, অর্থের মাধুর্য, ভাবের গভীরতায় তাঁর গানগুলি যেন হয়ে উঠেছে নটরাজের প্রতিটি বিভঙ্গ। ফলে তা ছন্দের ঝংকারে অনবদ্য।

রবীন্দ্রনাথ কীভাবে স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন?

উত্তর রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য কৃতিত্ব যে, তিনি তাঁর সংগীতের মধ্য দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন অনায়াস দক্ষতায়। তিনি মাটির স্নিখতাকে অতিক্রম করে কখনো-কখনো আমাদের নিয়ে গেছেন নীল আকাশের মর্মমাঝে। আবার, যখন স্বর্গ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন মর্তের মাটির স্পর্শে তা স্বর্গের চেয়েও মধুময় হয়ে উঠেছে। যেমন-

"তারায় তারায় দীপ্তিশিখার অগ্নি জ্বলে
নিদ্রাবিহীন গগনতলে-"

আবার, কখনও বলেছেন,

‘হোথায় ছিল কোন্ যুগে মোর নিমন্ত্রণ।’

এরপরেই ফিরে আসেন মাটির আলিঙ্গনে- ‘

হেথা মন্দমধুর কানাকানি জলে স্থলে
শ্যামল মাটির ধরা তলে।"

এভাবেই তিনি নিজের অজান্তে কখনো স্বর্গে কখনো মর্ত্যে মধুর আনাগোনা করেছেন। মানুষকে দেবতা বানিয়েছেন এবং তাঁকে দেবতার চেয়ে মহত্তর করে তুলেছেন মাত্র কয়েকটি সুর ও শব্দের বন্ধনে। এভাবেই তিনি হয়েছেন ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment