পশ্চিমবঙ্গের কৃষি প্রণালীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

পশ্চিমবঙ্গের কৃষি প্রণালীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি প্রণালীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

পশ্চিমবঙ্গের কৃষিকাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নলিখিত

মৌসুমি বৃষ্টিপাত নির্ভর কৃষিকাজ: পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করেই 55% জমিতে কৃষিকাজ করা হয়। ফলে, বেশিরভাগ জমিতে খারিফ শস্য উৎপাদিত হয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল বলে কৃষি উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, কারণ মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনায় সৃষ্ট খরা বা বন্যার ফলে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একক ফসলে গুরুত্ব: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে একক ফসলরূপে ধান চাষকেই মুখ্য প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে, পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় ধান চাষের পাশাপাশি গম, শাকসবজি, পাট কিংবা ফুল চাষ করা হয়ে থাকে।

জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক উৎপাদন: পশ্চিমবঙ্গে যে-সমস্ত কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয় তা প্রকৃতিগত দিক থেকে কৃষকদের নিজস্ব প্রয়োজন তথা জীবিকা অর্জনের জন্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।

নিবিড় কৃষিপ্রথা: পশ্চিমবঙ্গে জমির উপর জনসংখ্যার চাপ যথেষ্ট বেশি হওয়ায় একই জমিকে বছরে দুই বা ততোধিক বার ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধান চাষের ক্ষেত্রে দেখা যায় একবার বর্ষাকালে খারিফ ফসলরূপে একই জমিতে আমন ধান চাষ, আবার শীতকালে রবি ফসলরূপে বোরো ধান চাষ করা হয়। এ ছাড়া, জমির উপর জনসংখ্যার চাপ যথেষ্ট বেশি। তাই, হেক্টর প্রতি কৃষিজ উৎপাদন মাত্র 2514 কেজি।

শ্রম নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা: পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ব্যবস্থায় যন্ত্র অপেক্ষা মানুষের শ্রমশক্তির ব্যবহার বেশি। এখানে ট্রাক্টরের ব্যবহার কম। কোথাও কোথাও হ্যান্ড-টিলারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও শ্রম এত সুলভ যে যন্ত্র ব্যবহার লাভজনক হয় না। এ ছাড়া জমির আয়তনও ক্ষুদ্র হওয়ায় যন্ত্র ব্যবহার অসুবিধাজনক।

জলসেচের অপ্রতুলতা :
পশ্চিমবঙ্গে জলসেচ ব্যবস্থা অন্য রাজ্যের তুলনায় উন্নত হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পশ্চিমবঙ্গে খাল ও নলকূপ দ্বারা জলসেচ করা হয়। তবে খালগুলি অনিত্যবহ। কারণ, মালভূমির নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট এবং গ্রীষ্মকালে জলস্তর মাটির অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় নলকূপের দ্বারা জলসেচ ব্যবস্থাও বর্তমানে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে আর্সেনিক দূষণ-এর সমস্যা। তাছাড়া, জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য অনেক সময় একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। এইভাবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিক্ষেত্রে শস্যাবর্তন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।

জনপ্রতি উৎপাদন কম : 
পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব অধিক হওয়ায় মোট কৃষিজ উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও জনপ্রতি উৎপাদন যথেষ্ট কম। এ ছাড়া, জমিতে প্রকৃত জমির মালিক ছাড়াও ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের চাপ থাকায় জনপ্রতি উৎপাদন হার আরও কমে যায়।

ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার প্রচলন:
বর্তমানে (বিগত দুই দশকে) ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার প্রচলন-এর দ্বারা পশ্চিমবঙ্গে কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র চাষিদের হাতে চাষযোগ্য জমি আসায় এবং কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে চাষ: পশ্চিমবঙ্গের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে এবং জমির উর্বরতা বজায় রাখতে একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। একে শস্যাবর্তন বলে।

আধুনিকীকরণ: পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কীটনাশক প্রয়োগ, জলসেচের বন্দোবস্ত, উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ফসল চাষ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন, গবাদি পশুপালন ও মাছ চাষের প্রসার ঘটছে।

Leave a Comment