পশ্চিমবঙ্গের চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও

পশ্চিমবঙ্গের চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও
পশ্চিমবঙ্গের চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বাগিচা ফসল হল চা। চা উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এ রাজ্যে চা উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ হল –

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

জলবায়ু : পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের আর্দ্র মৌসুমি জলবায়ুতে চা চাষ ভালো হয়।

  • উষ্ণতা : এ রাজ্যের তরাই, ডুয়ার্স ও পার্বত্য অঞ্চলের বার্ষিক গড় উয়তা 20°-27° সেলসিয়াস, যা চা চাষের পক্ষে আদর্শ।
  • বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দার্জিলিং হিমালয়ে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে, চা চাষের প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত (150 – 200 সেমি)-এর অভাব হয় না।
  • তুষারপাত: অধিক তুষারপাত চা গাছের পক্ষে ক্ষতিকর। পশ্চিমবঙ্গের চা উৎপাদক অঞ্চলগুলিতে শীতে মাঝে মধ্যে তুষারপাত হয়।
  • ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ: সরাসরি সূর্যালোক চা গাছের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই চা বাগিচার মধ্যে মধ্যে ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ লাগানো হয়।
  • কুয়াশা ও শিশির : রাতের শিশির ও সকালের পর্যাপ্ত কুয়াশা এবং আর্দ্র আবহাওয়া দার্জিলিং-এর চা-কে স্বাদ ও গন্ধে পৃথিবী বিখ্যাত করেছে।

ভূমির প্রকৃতি: চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ানো ক্ষতিকর। তাই দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের ঢালযুক্ত ভূমি চা চাষের পক্ষে আদর্শ।

মৃত্তিকা : পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ আম্লিক পডজল মৃত্তিকায় চা চাষ খুব ভালো হয়। মাটিতে অধিক ফসফরাস ও পটাশ্ থাকায় দার্জিলিং-এ উৎকৃষ্ট চা উৎপাদিত হয়।

অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ

দক্ষ শ্রমিক: চা চাষের প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক, বিশেষ করে ‘দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি’ তোলার জন্য দক্ষ মহিলা শ্রমিকের অভাব উত্তরবঙ্গে হয় না।

সার প্রয়োগ: চা গাছ জমির উর্বরতা শক্তি দ্রুত কমিয়ে দেয়, তাই জমিতে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

মূলধন: চা বাগিচা তৈরি থেকে চা উৎপাদন, প্রতিটি পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।

পরিবহণ: চা মূলত বাণিজ্যিক ফসল। তাই চা চাষে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা প্রয়োজন। কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে এ রাজ্যের চা বিদেশে রপ্তানি করার সুবিধা রয়েছে।

কারখানা: চা পাতা শুকিয়ে যাওয়ার আগে তা কারখানায় পাঠানো প্রয়োজন, তাই পশ্চিমবঙ্গে চা বাগিচার নিকটেই কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।

Leave a Comment