![]() |
পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক উদ্ভিদের বর্ণনা দাও। |
পার্বত্য অঞ্চলের উদ্ভিদ
(i) অবস্থান: উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলায় এই জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়।
(ii) উদ্ভিদসমূহ:
- (a) 3000 মি-এর বেশি উচ্চতার উদ্ভিদ: আল্পীয় উদ্ভিদ দেখা যায়। যেমন- জুনিপার, রোডোডেনড্রন, লাইকেন প্রভৃতি।
- (b) 2000 – 3000 মি-এর মধ্যবর্তী উচ্চতার উদ্ভিদ: সরলবর্গীয় উদ্ভিদ দেখা যায়। যেমন- পাইন, ওক, স্পুস, ফার, সিডার, দেবদারু প্রভৃতি।
- (c) 1000 – 2000 মি-এর মধ্যবর্তী উচ্চতার উদ্ভিদ: মূলত চিরহরিৎ উদ্ভিদ জন্মায়। যেমন- পিপুল, বাঁশ, শিমুল, কুসুম, বার্চ প্রভৃতি।
- (d) পর্বতের পাদদেশ থেকে 1000 মি-এর মধ্যবর্তী উদ্ভিদ: এখানে চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী উদ্ভিদের মিশ্র বনভূমি দেখা যায়। যেমন- শাল, সেগুন, শিশু, সর্পগন্ধা, গামার প্রভৃতি।
(iii) বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- (a) পার্বত্য অঞ্চলে যাতে গাছের মাথায় বরফ সঞ্চিত না হয়, তাই গাছগুলি শঙ্কু বা মোচাকৃতির হয়।
- (b) গাছগুলির কাঠ নরম ও হালকা প্রকৃতির হয়।
- (c) গাছের পাতা সরু ও সূচালো হয়।
- (d) গাছগুলি দীর্ঘ, সরু ও ওপরের দিকে ডালপালাযুক্ত হয়।
তরাই অঞ্চলের উদ্ভিদ
(i) অবস্থান: পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে দার্জিলিং জেলার দক্ষিণভাগ, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার ডুয়ার্স অঞ্চলে দেখা যায়।
(ii) উদ্ভিদসমূহ: শাল, সেগুন, শিশু, গর্জন, গামার, চাপলাশ, বাঁশ প্রভৃতি।
(iii) বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- (a) তরাই ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয় বলে এই গাছগুলি চিরহরিৎ প্রকৃতির, বেশি ডালপালা যুক্ত, ঝোপময়।
- (b) গাছগুলির কাঠ শক্ত ও ভারী হয়।
- (c) বনভূমির তলদেশে লতা, পরগাছা, পরজীবী উদ্ভিদ থাকে।
মালভূমি অঞ্চলের উদ্ভিদ
(i) অবস্থান: পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জেলায় দেখা যায়।
(ii) উদ্ভিদসমূহ: শাল, শিমুল, পলাশ, মহুয়া, কেন্দু, অর্জুন প্রভৃতি গাছগুলি আছে।
(iii) বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- (a) বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায়।
- (b) এই জাতীয় উদ্ভিদ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় দেখা যায়।
- (c) শীতকালে গাছগুলির পাতা ঝরে যায়।
সমভূমি অঞ্চলের উদ্ভিদ
(i) অবস্থান: উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, হাওড়া প্রভৃতি জেলায় এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
(ii) উদ্ভিদসমূহ: আম, জাম, কাঁঠাল, বট, নিম, অশ্বত্থ প্রভৃতি।
(iii) বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- (a) অধিক উষ্ণতা ও আর্দ্রতার জন্য এখানে আর্দ্র পর্ণমোচী ও কিছু কিছু চিরহরিৎ বৃক্ষ জন্মায়।
- (b) গাছগুলি মাঝারি দৈর্ঘ্যের, পুরু ও অমসৃণ ছালযুক্ত, বড়ো বড়ো পাতা যুক্ত হয়।
উপকূল অঞ্চলের উদ্ভিদ
(i) অবস্থান: বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সুন্দরবন ও মেদিনীপুরের সামান্য অংশে দেখা যায়।
(ii) উদ্ভিদসমূহ: সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হেঁতাল, নারকেল প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায়।
(iii) বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- (a) জোয়ার অধ্যুষিত লবণাক্ত মৃত্তিকায় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।
- (b) সমুদ্রের জলের হাত থেকে বাঁচার জন্য উদ্ভিদগুলিতে শ্বাসমূল, ঠেসমূল, জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায়।