পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও

পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও
পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
ধান পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য। ধান উৎপাদনে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথম। পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশগুলি হল –

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

জলবায়ু : পশ্চিমবঙ্গের ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির জলবায়ু ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।

  1. উষ্ণতা: পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক গড় উয়তা 22° – 30° সেলসিয়াস, যা ধান উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল।
  2. বৃষ্টিপাত : মূলত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষ করা হয়। এই রাজ্যের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 150-200 সেমি, যা ধান চাষে অত্যন্ত সহায়ক।
  3. আর্দ্রতা: পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকালের অধিক আর্দ্রতা (80%) ধান রোপণের পক্ষে উপযোগী এবং শরৎকালের শুষ্ক ও রোদ ঝলমলে আবহাওয়া আদর্শ।

ভূমির প্রকৃতি: সমতল ভূমি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ। তাই, পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় বদ্বীপ সমভূমিতে প্রচুর ধান চাষ হয়। তবে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলেও ধাপ কেটে ধান চাষ করা হয়।

মৃত্তিকা: উর্বর পলিমাটিতে ধানের ফলন ভালো হয়। এই রাজ্যের সমভূমি উর্বর পলিগঠিত হওয়ায় ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।

অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ

শ্রমিক: ধান চাষের জমি তৈরি, বীজতলা, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, ধান কাটা, বাঁধা, ঝাড়া প্রভৃতি কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। জনবহুল পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকের অভাব হয় না। এই রাজ্যের মানুষের প্রধান জীবিকাই কৃষিকাজ।

মূলধন :
চাষিরা যাতে উন্নত ধান বীজ, সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি কিনতে পারেন তার জন্য রাজ্যে কৃষক ক্রেডিট কার্ড, কৃষি ঋণ প্রভৃতির ব্যবস্থা রয়েছে।

আধুনিকীকরণ : পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, ট্র্যাক্টর, রিপার প্রভৃতি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ (IR-8, জয়া, রত্না, পঙ্কজ, পাম প্রভৃতি) ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবহণ: ধান চাষকে লাভজনক করে তোলার জন্য কৃষিক্ষেত্র ও বাজারের মধ্যে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে আমাদের রাজ্যে পাকা সড়কপথ, সেতু নির্মাণের কাজ ব্যাপক হারে হচ্ছে।

Leave a Comment