পেশাদারি শাখা হিসেবে সংক্ষেপে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো

পেশাদারি শাখা হিসেবে সংক্ষেপে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো
পেশাদারি শাখা হিসেবে সংক্ষেপে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।

পেশাদারি ইতিহাস

পেশাদারি ইতিহাস-এর সূচনা হয় ঊনবিংশ শতকের একেবারে শেষদিকে। ঠিক সেই সময় থেকেই শুরু হয় পেশাদারি দক্ষতা নিয়ে ইতিহাসচর্চা। কল্পনা বা পক্ষপাতিত্বের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ঐতিহাসিকগণ যুক্তিপূর্ণ এবং বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তথ্যসংগ্রহ এবং তা যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে যে ইতিহাস রচনা করেন, তা পেশাদারি ইতিহাস নামে পরিচিত।

পেশাদারি শাখারূপে ইতিহাসের গুরুত্ব

মানবসমাজের গতিশীলতার প্রমাণ : মানবজীবনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল গতিময়তা ও পরিবর্তনশীলতা। উত্থানপতন, পরাজয়-অভ্যুদয় দিয়ে ঘেরা প্রবহমান মানবজীবনের কাহিনিই হল ইতিহাস। মানবসমাজ কীভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় এসেছে, সেই কাহিনি ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে।

ইতিহাস অতীতকে জানায় : ইতিহাস অবশ্যই অতীত কাহিনি। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে প্রকৃতির নানা ক্রিয়াকলাপ ও তার সঙ্গে মানবসমাজের অবস্থান, টিকে থাকা, এগিয়ে চলা, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থান, সমাজ-সংস্কৃতি ও অতীতের অন্যান্য বিষয় ইতিহাস থেকে জানা যায়।

অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতু: ইতিহাস হল অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুর মতো। নেমিয়ারের ভাষায়, ‘ঐতিহাসিকরা কল্পনা করেন অতীতকে আর স্মরণ করেন ভবিষ্যৎকে।’

বর্তমানের ভিত্তি তৈরি: ইতিহাস অতীতের কাহিনি হলেও তা থেকে এমন কিছু শিক্ষা পাওয়া যায়, যা বর্তমানের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং ভবিষ্যতে পথ চলার দিশা দেখায়।

জ্ঞানের বিকাশে:
ইতিহাস হল জ্ঞানের ভাণ্ডার। তাই বলা হয়- History makes us better thinkers. ইতিহাস পাঠ করলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে জানা যায়।

ধারাবাহিকতা বুঝতে:
বিভিন্ন যুগের মানুষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে কালের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে ইতিহাস। বর্তমান প্রজন্ম এই ধারাবাহিকতা থেকেই জ্ঞান লাভ করতে পারে।

নৈতিক শিক্ষা প্রদান: ইতিহাসের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষাদান বিষয়ে হেরোডোটাস থেকে টমাস হবস-সহ বিভিন্ন পণ্ডিতই সহমত পোষণ করেন। ফ্রান্সিস বেকন-এর মতে, ‘ঐতিহাসিকগণ মানুষকে জ্ঞানী করে আর ইতিহাস মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দান করে।’

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ধারণা প্রদান:
ইতিহাস থেকে আমরা মানবসমাজের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ধারাবাহিকতার পরিচয় পাই।

ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়: ইতিহাস হল নানান বিষয়ের সমন্বয়। পৃথিবীতে যে বিষয়ের কথাই বলা হোক-না-কেন তার একটি নিজস্ব ইতিহাস আছে। ওইসব বিষয় কীভাবে, কেমন করে আলোচনা করতে হবে তা জানার জন্য ইতিহাসের সাহায্য নিতে হবে।

জাতীয়তাবোধের বিকাশ ও জাতীয় সংহতি রক্ষা: বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, শাসকের শোষণের বিরুদ্ধে কোনো জাতির সংগ্রাম থেকে যে জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠে তা ইতিহাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। অনেক সময় ঐতিহাসিকগণ নিজেদের দেশের ইতিহাস রচনাকালে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল দিকটিকে বেশি করে তুলে ধরেন, যা পড়ে পাঠকের অন্তরে ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। ইতিহাস তখন হয়ে ওঠে জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যম।

Leave a Comment