![]() |
প্যারি কমিউন |
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে প্রাশিয়ার কাছে সেদানের যুদ্ধে ফ্রান্স পরাজিত হয় ও তৃতীয় নেপোলিয়ন সিংহাসন ত্যাগ করেন। ফ্রান্সে একটি অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকে। বর্দো শহরে ফ্রান্সের জাতীয় সভা প্রাশিয়ার চাপানো অসম্মানজনক শর্ত মেনে নেয়। জার্মান সৈন্য প্যারিসে প্রবেশ করে ও ১৮৭১ সালের জানুয়ারি মাসে ভাসেই প্রাসাদে সংযুক্ত জার্মানির সম্রাট হিসেবে প্রাশিয়ার রাজা উইলিয়াম অভিষিক্ত হন। প্যারিসের মানুষ, বিশেষ করে চরমপন্থী প্রজাতান্ত্রিকরা এটা মেনে নিতে পারেনি। ১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ প্যারিসের বিদ্রোহীরা ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ২৬শে মার্চ বিদ্রোহের নেতারা ১৭৯৩-এর জ্যাকোবিন শাসনের অনুসরণে ‘প্যারিস কমিউন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্যারিসের শাসনভার এই কমিউন-এর হাতে তুলে দেন। প্রায় দু’মাস ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পর কমিউন ফরাসি সৈন্যবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। ২১ থেকে ২৮শে মে-র মধ্যে সংঘর্ষে অজস্র মানুষ নিহত হন এবং সশস্ত্র শক্তির মাধ্যমে ফরাসি বাহিনী কমিউনকে দমন করে। প্যারিস কমিউন-এর এই স্বল্পস্থায়ী শাসনকে নানাভাবে দেখা হয়েছে। বিদ্রোহীদের মধ্যে ছিলেন চরমপন্থী রাজনৈতিক, সমাজবাদী প্রজাতান্ত্রিক ও শ্রমজীবী মানুষ। অনেকে এই বিদ্রোহকে ‘শেষ জ্যাকোবিন বিদ্রোহ’ বলেছেন। আবার অন্যান্যরা প্যারিস কমিউনকে ‘প্রথম সমাজবাদী ও সাম্যবাদী বিপ্লবের প্রয়াস’ বলে মনে করেছেন। কার্ল মার্কস-এর লেখা ‘সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স’ (১৮৭১ খ্রিঃ) গ্রন্থে শ্রমজীবী মানুষের এই লড়াইয়ের কথা অমর হয়ে আছে।