![]() |
ফ্রান্সের শিল্পায়নে বাধাগুলি কী ছিল? ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লব কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল? |
প্রথম অংশ
প্রতিবন্ধকতা বা বাধাসমূহ
[১] কৃষি কাঠামো: ফ্রান্সের কৃষিকাঠামো শিল্পবিপ্লবের পক্ষে উপযুক্ত ছিল না, কারণ ফরাসি বিপ্লবের ফলে বহু জমি কৃষকদের হাতে এলেও তা ছিল খন্ড খন্ড এবং একারণেই ইংল্যান্ডের মতো বৃহত্তর ভূ-খণ্ডকে একই মালিকানাধীনে এনে চাষবাসের সুযোগ ফ্রান্সে ছিল না।
[২] রাজনৈতিক কারণ: ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লব ও নেপোলিয়নীয় যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধা পেয়েছিল। অনেক গবেষকের মতে, ফরাসি বিপ্লবের সময় যে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা শিল্প বিকাশ ব্যাহত করেছিল।
[৩] খনিজ সম্পদের স্বল্পতা: ফ্রান্সে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা বা লৌহ সম্পদের অভাবে শিল্পবিপ্লব বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, বিশেষত কয়লার অভাবে যন্ত্রশিল্প ও রাসায়নিক শিল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক ছিল না।
[৫] সামাজিক মর্যাদার অভাব: ফ্রান্সে বুর্জোয়া বা ধনী ব্যবসায়ীদের সামাজিক মর্যাদা ছিল না। এজন্য ফ্রান্সের সামাজিক পরিবেশও শিল্প গঠনের অনুকূল ছিল না।
[৬] ফরাসি বিপ্লবের ফলশ্রুতি: ফরাসি বিপ্লবের সময় শিল্প নানা কারণে উপেক্ষিত হয়। ফরাসি বিপ্লবের পরে ফ্রান্সের উপনিবেশগুলি হাতছাড়া হওয়ার ফলে কাঁচামালের সরবরাহ এবং উৎপাদিত ফলের বাজার না থাকায় ফ্রান্সে শিল্পবিস্তারে বাধা পড়ে।
দ্বিতীয় অংশ
ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লবের সূচনা ও প্রসার
[১] ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ও অর্থমন্ত্রী ক্যালোনের উদ্যোগ: ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই-এর অর্থমন্ত্রী ক্যালোন ফ্রান্সে শিল্পস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ এনে ফ্রান্সে কলকারখানা প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রচেষ্টা শুরু হয়। ফরাসি বিপ্লবের শেষের দিকে ফরাসি সুতাকলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং শ্রমিকের সংখ্যাও আনুপাতিকভাবে – বেড়ে যায়। এই সময় খনি ও ইস্পাত শিল্পেরও কিছুটা অগ্রগতি হয়।
[৩] লুই ফিলিপের আমল: লুই ফিলিপের শাসনকালে (১৮৩০-১৮৪৮ খ্রি.) ফ্রান্সে ব্যাংক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হয়। এর পাশাপাশি সড়ক ও নদীপথে পরিবহণ ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। তাঁর সময়েই ফ্রান্সে রেলপথ গড়ে ওঠে। ফ্রান্সের তুলোঁ, বর্দো, অলিসাস প্রভৃতি শিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চলে রেল সংযোগ স্থাপিত হয়।
[৪] তৃতীয় নেপোলিয়নের উদ্যোগ: ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের পর তৃতীয় নেপোলিয়ন ফ্রান্সে অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ক্রেডিট মোবিলিয়র ও ক্রেডিট ফাঁসিয়ার নামে শিল্প ব্যাংক কারখানা করেন। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দানের মাধ্যমে শিল্প-বিনিয়োগে উৎসাহ দেন। বিশ বছরের মধ্যে ফ্রান্সের শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। ফ্রান্সে শিল্পক্ষেত্রে প্রধান বিষয়টি হল বস্ত্রশিল্প এবং একারণেই ফ্রান্সের রপ্তানিকৃত পণ্যের অর্ধেক ছিল বস্ত্র, কিন্তু কয়লার অভাবে ফ্রান্সে বস্ত্রশিল্প ও রাসায়নিক শিল্পের তেমন অগ্রগতি হয়নি।