বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও – স্বদেশি আন্দোলন-জাত রাজনৈতিক উত্তেজনা, কলকারখানায় ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শ্রমিক আন্দোলনকে গতিশীল ও সংগ্রামমুখর করে তোলে।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও পড়ে নেওয়া যাক।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বিশ শতকের সূচনা থেকে জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধীরে ধীরে শ্রমিক সমস্যার প্রতি দৃষ্টি দিতে থাকেন। বিপিনচন্দ্র পাল, জি সুব্রহ্মণ্য আয়ার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। ডঃ আদিত্য মুখোপাধ্যায়-এর মতে, “১৯০৩-০৮ সালের স্বদেশি আন্দোলন ছিল শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক সুস্পষ্ট দিকচিহ্ন।” স্বদেশি আন্দোলন-জাত রাজনৈতিক উত্তেজনা, কলকারখানায় ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শ্রমিক আন্দোলনকে গতিশীল ও সংগ্রামমুখর করে তোলে। বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির সক্রিয় অংশগ্রহণ এই যুগের শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই যুগের চারজন উল্লেখযোগ্য শ্রমিক নেতা হলেন অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, এথানাসিয়াস অপূর্বকুমার ঘোষ এবং প্রেমতোষ বসু। প্রথম তিনজন ছিলেন ব্যারিস্টার এবং শেষোক্ত ব্যক্তি ছিলেন উত্তর কলকাতার একটি ছোটো ছাপাখানার মালিক। এ সময় সরকারি ছাপাখানা, রেল, ট্রাম, কলকাতা কর্পোরেশন, চটকল-সর্বত্রই ধর্মঘট শুরু হয় এবং জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান। আসলে বিদেশি পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদী সরকারি রাষ্ট্রযন্ত্রের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে তাঁরা দেশীয় শ্রমিকদের সমর্থন জানান। এ যুগের শ্রমিক আন্দোলনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এই যে, নিছক অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া নয়-এর সঙ্গে রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাও যুক্ত হয় এবং শ্রমিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে হাওড়ার বার্ন আয়রন ওয়ার্কস-এর কর্মীদের ধর্মঘট ছিল স্বদেশি যুগে বাংলার প্রথম শ্রমিক ধর্মঘট। এরপর কলকাতায় ট্রাম শ্রমিকরা এবং কর্পোরেশনের দু’হাজার কুলি ও ঝাড়ুদার ধর্মঘটে সামিল হয়। কলকাতাস্থিত ভারত সরকারের ছাপাখানার কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করলে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় ও শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী তাদের পাশে দাঁড়ান। মূলত এই দুই বিশিষ্ট নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্রিন্টার্স এ্যান্ড কম্পোজিটার্স লীগ’ (২১শে অক্টোবর, ১৯০৫)। অনেকের মতে এটি হল ‘বাংলার প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন’। ১৯০৫ সালের ১৬ই – অক্টোবর অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের দিন সারা বাংলায় শিল্প-শ্রমিকরা ধর্মঘট করে এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে একে অন্যের হাতে রাখি বেঁধে দেয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ‘ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে’-র শ্রমিক কর্মচারীরা ধর্মঘট করে এবং ‘রেলওয়ে মেনস্ ইউনিয়ন’ (Railway Men’s Union) প্রতিষ্ঠা করে। চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপিনচন্দ্র পাল, লিয়াকৎ হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ধর্মঘটীদের পাশে দাঁড়ান। এই আন্দোলন ক্রমে সাহেবগঞ্জ, জামালপুর, আসানসোল, খঙ্গপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দেও নানা স্থানে রেল ধর্মঘট হয়। চটকল শ্রমিকরাও পিছিয়ে ছিল না। ১৯০৫ থেকে ১৯০৮-এর মধ্যে বাংলার ৩৭টি চটকলে বারংবার ধর্মঘট হয়। অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চটকল শ্রমিকদের নিয়ে বজবজে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান মিল হ্যান্ডস্ ইউনিয়ন’। কেবলমাত্র বাংলা নয়-মাদ্রাজ, পাঞ্জাব, বোম্বাই, আমেদাবাদ, কানপুর প্রভৃতি স্থানেও বিভিন্ন শিল্প ধর্মঘট চলতে থাকে। তামিলনাডুর তৃতিকোরিনে বাড়তি মজুরির দাবিতে ইংরেজ কোম্পানিতে ধর্মঘট চলে। চিদাম্বরম পিল্লাই গ্রেপ্তার হলে মাদ্রাজে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি শহরে ধর্মঘটের ঢেউ স্পর্শ করে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তিলকের কারাবরণ উপলক্ষ্যে বোম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকরা ছয়দিন-ব্যাপী ব্যাপক ধর্মঘট পালন করে। বহু স্থানে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ বাধে। ছোটো ব্যবসায়ী-এমনকী গৃহভৃত্যরাও এই ধর্মঘটে অংশ নেয়। এইভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপিত হয় তবে এ যোগাযোগ স্থায়ী হয়নি।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment