বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব

বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব – ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লব রাশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এক সর্বাত্মক পরিবর্তনের সূচনা করে।
 
সুস্বাগতম প্রিয় শিক্ষার্থী। Prayaswb-এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব পড়ে নেওয়া যাক।

বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব

বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব
বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব

বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব

রাশিয়ার প্রভাব

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লব রাশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এক সর্বাত্মক পরিবর্তনের সূচনা করে। ১৭৮৯-এর ফরাসি বিপ্লব ব্যতীত এমন ব্যাপক, সুদূরপ্রসারী ও সর্বাত্মক বিপ্লব ইতিহাসে আর কখনও সংঘটিত হয়নি। ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব মূলত ইউরোপে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বলশেভিক বিপ্লব এক বিশ্ব-বিপ্লবের সূচনা করে সমগ্র বিশ্বে এক নবচেতনার সঞ্চার করে। রাশিয়ার সীমানা অতিক্রম করে এই বিপ্লবের প্রভাব পৃথিবীর নানা দেশে পরিব্যাপ্ত হয়।

রাজনৈতিক প্রভাব

এই বিপ্লবের ফলে জারের স্বৈরতন্ত্র, অভিজাতবর্গের বিশেষ অধিকার ও গির্জার প্রাধান্য লোপ করে রাশিয়ায় সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রাশিয়ার নতুন নামকরণ হয় ‘ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক’ (U.S.S.R.)। ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পত্তন হয়। রাজতন্ত্র বা অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র নয়- যথার্থভাবেই শ্রমিক, কৃষক প্রভৃতি মেহনতি মানুষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বহারার সরকার এবং বিশ্বরাজনীতিতে মার্কসবাদী দর্শনের প্রথম যথার্থ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। নভেম্বর বিপ্লবের ধাক্কায় জার্মানির হোহেনজোলার্ন রাজবংশ এবং অস্ট্রিয়ার হ্যাপস্বার্গ রাজবংশের পতন ঘটে। যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের ফলে শ্রমিক বিক্ষোভে জার্মানি উত্তাল হয়ে ওঠে। বলশেভিক আদর্শের সঙ্গে পরিচিত যুদ্ধ-প্রত্যাগত জার্মান সৈন্যরাও দেশে বুশ বিপ্লবের কথা বলতে থাকে। রুশ বিপ্লবের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয় এবং এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। চিনে সান ইয়াৎ-সেন এবং তুরস্কে কামাল পাশা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রুশ সাহায্য লাভ করেন। ভারতীয় বিপ্লবীদের ওপর এই বিপ্লবের প্রভাব ছিল ব্যাপক। বুশ বিপ্লবের প্রেরণায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়। বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের মধ্যে সংহতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে লেনিনের উদ্যোগে মস্কোতে ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক’ বা ‘কমিন্টার্ন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘কমিন্টার্ন’-এর দ্বিতীয় অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি এম. এন. রায় যোগদান করেন। পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই মতবাদ বিস্তৃত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে চেকোশ্লোভাকিয়া, বুমানিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশে সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

সামাজিক প্রভাব

বুশ বিপ্লব সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে। বুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অ-বুশ জাতিগুলিকে সমমর্যাদা ও সমান অধিকার দিয়ে বুশ-জীবনের অঙ্গীভূত করা হয়। রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতন্ত্র। ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্র চ্যালেঞ্জ জানায়। বিশ্বরাজনীতি পুঁজিপতি ও সমাজতান্ত্রিক দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বুশ বিপ্লব হল ধনতন্ত্র-বিরোধী বিপ্লবের অগ্রদূত। চিন, ভারতবর্ষ, মধ্যপ্রাচ্য ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সাম্যবাদী ভাবধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন শুরু হয়। ইউরোপে সাম্যবাদী ভাবধারার গতি রোধ করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি ধনতান্ত্রিক দেশ শ্রমিক কল্যাণমূলক আইন প্রবর্তন করে শ্রমিক-শোষণকে সীমিত করতে উদ্যোগী হয়। এছাড়া, সাম্যবাদের গতি রোধ করার জন্য এই দুটি দেশ ফ্যাসিবাদের প্রতি আপসমূলক মনোভাব গ্রহণ করে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে রাশিয়াতেই প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যক্তিগত মালিকানা ও ব্যক্তিগত মুনাফার নীতি পরিত্যক্ত হয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানগুলির ওপর রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদন ও বণ্টন-ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়। কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই জমিদারদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয় এবং কলকারখানাগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত করে সেগুলির পরিচালনভার শ্রমিকদের ওপর অর্পণ করা হয়। এইভাবে রাশিয়াতে এক নতুন ধরনের শাসন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment