![]() |
বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও |
সূচনা
স্মরণাতীত কাল থেকেই বাংলার কারিগরেরা প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানে যথেষ্ট অগ্রসর ছিলেন। টেকি, কপিকল, কুমোরের চাক-এসব তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। উনিশ শতকের বাংলায় প্রযুক্তি ও কারিগরিক্ষেত্রে প্রশংসনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
- কোনো ইউরোপীয়র ন্যূনতম সাহায্য ছাড়াই টিটাগড়ের এক দরিদ্র সামান্য কামার পরিবারের সন্তান গোলকচন্দ্র নন্দী ‘বাষ্পীয় ইঞ্জিন’ তৈরি করেন (১৮২৭ খ্রিঃ)।
- কোনো রকম প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই শিবচন্দ্ৰ নন্দী দীর্ঘদিন ধরে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। তাঁকে ভারতের প্রথম ইলেকট্রিক্যাল ও টেলিকম ইঞ্জিনিয়র বলা হয়।
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শিক্ষক সীতানাথ ঘোষ গম ভাঙানোর যন্ত্র ও যন্ত্রচালিত লাঙল এবং স্টিমার জাতীয় একটি যান্ত্রিক জলযানও তৈরি করেন। কলম ও মুদ্রাযন্ত্রের জন্য কালি তৈরিতেও তাঁর নজর ছিল।
- কুমিল্লার বিশিষ্ট দেশসেবক ও চিকিৎসক মহেন্দ্রচন্দ্র নন্দী নিজ বাসভূমে দেশলাই-সহ একটি ক্ষুদ্রশিল্পের কারখানা খোলেন। সেখানে দা, বটি, সুপারি কাটা যাঁতি প্রভৃতি তৈরি হত।
- বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হেমেন্দ্রমোহন বসু বাংলায় কলের গান, গানের ‘রেকর্ড’, মোটর গাড়ি, বাই-সাইকেল, টর্চলাইট, সুগন্ধী তেলের কারখানা প্রভৃতি তৈরি করেন।
- ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্পে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও তাঁর পুত্র সুকুমার রায়।
- প্যারিমোহন বাগচি বা পি. এম. বাগচি কালি, রাবার স্ট্যাম্প, সিলমোহর, আতর এবং পঞ্জিকা প্রভৃতির ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন।
- বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন এক শিল্প প্রতিষ্ঠান- ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’।
- ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে কলকাতায় ‘কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে তা শিবপুরে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এর নাম ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’।
- ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে বাংলায় ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গড়ে ওঠে। এর লক্ষ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা। শুরুতেই দেশীয় নেতৃমণ্ডলী দু-দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদল মনে করত যে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’-ই দেশের সব শিক্ষার দায়িত্ব বহন করবে। অপরদল মনে করত যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের মূল লক্ষ হবে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার। প্রথম দলে ছিলেন গুরুদাস ব্যানার্জী, সতীশ মুখার্জী, হীরেন দত্ত প্রমুখ। দ্বিতীয় দলে ছিলেন তারকনাথ পালিত, নীলরতন সরকার, মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রমুখ। মতপার্থক্য হেতু ১৯০৬ সালের ১ জুন দুটি প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক ভাবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়। প্রথম দলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও স্কুল’। দ্বিতীয় দল প্রতিষ্ঠা করে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’। পরে ১৯১০ সালে দুই প্রতিষ্ঠান এক হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর এই দুই প্রতিষ্ঠান ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়’-এ রূপান্তরিত হয়। তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট’ বর্তমানে ‘যাদবপুর কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ‘নামে বিকশিত হয়ে উঠেছে।