![]() |
বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি আলোচনা করো। এর সীমাবদ্ধতা কী ছিল? |
‘নবজাগরণ’ কী?
বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি
বাংলার নবজাগরণ প্রকৃত নবজাগরণ: রাজা রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষী উনিশ শতকের বাংলার মানসিক স্ফুরণ ও সংস্কার আন্দোলনকে নবজাগরণ বলেছেন। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তাঁর ‘The History of Bengal’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলাকে নবজাগরণের পীঠস্থান বলে অভিহিত করেছেন। অধ্যাপক সুশোভন সরকারও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেছেন যে, বাংলাতেই সর্বপ্রথম বুর্জোয়া অর্থনীতি ও আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব অনুভূত হয়। এর ফলে যে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে তাকে সাধারণভাবে নবজাগরণ বলা হয়ে থাকে।
বাংলার নবজাগরণ প্রকৃত নবজাগরণ নয়: পণ্ডিত অশোক মিত্র ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারির সময় বাংলায় উনিশ শতকীয় জাগরণকে তথাকথিত নবজাগরণ বলেছেন। গবেষক সুপ্রকাশ রায় বাংলার নবজাগরণকে ইউরোপের থেকে ভিন্ন সামন্ততান্ত্রিক ভূস্বামীদের আন্দোলন বলেছেন। ইউরোপের নবজাগরণ ছিল সামন্তপ্রথার বিরুদ্ধে; কিন্তু বাংলার নবজাগরণ ছিল জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সামন্ততান্ত্রিক ভূস্বামীদের আন্দোলন। আবার বাংলার বিশাল কৃষক শ্রেণি ছিল ভূস্বামীদের শত্রু ও বিরোধী। ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষ একে একটি ঐতিহাসিক প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন।
নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা
- ইটালির ফ্লোরেন্স নগরী ইউরোপের নবজাগরণে যে ভূমিকা পালন করে, ইংরেজদের ঔপনিবেশিক কেন্দ্র কলকাতা তা পালন করতে পারেনি।
- শহরকেন্দ্রিক বাংলার নবজাগরণে কৃষক ও শ্রমিক-সহ সমাজের একটি বড়ো অংশ শামিল হতে পারেনি।
- বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত বর্ণহিন্দুদের। মুসলিম সমাজ এর বাইরে ছিল।
- বাংলার নবজাগরণের প্রবক্তারা বাংলার সমাজকাঠামো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরোপুরি সাফল্যলাভ করতে পারেননি।