বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও – বাংলার প্রাচীনতম অধিবাসীরা ‘চণ্ডাল’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯১১ সালের জনগণনায় তাদের নাম হয় ‘নমঃশূদ্র’। তাদের আদি বাসস্থান ছিল পূর্ববঙ্গের যশোহর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর- এই ছটি জেলায়।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও পড়ে নেওয়া যাক।
বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
 |
বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
|
বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলার প্রাচীনতম অধিবাসীরা ‘চণ্ডাল’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯১১ সালের জনগণনায় তাদের নাম হয় ‘নমঃশূদ্র’। তাদের আদি বাসস্থান ছিল পূর্ববঙ্গের যশোহর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর- এই ছটি জেলায়। অবিভক্ত বাংলার হিন্দু সমাজে এদের স্থান ছিল দ্বিতীয়- প্রথম স্থানে ছিল মাহিষ্যরা। ১৯০১ সালের জনগণনায় নমঃশূদ্রদের সংখ্যা ছিল ১৮,৪৮,৪৮৩ জন। ১৯৩১-এ তা হয় ২০, ৯৪,৯৫৭ জন। পূর্ববঙ্গের মোট হিন্দুদের তুলনায় নমঃশূদ্রেরা ছিল ১৯০১ সালে ১৭.৬৬%। ১৯৩১-এ ছিল ১৮.৯৪%। আর উল্লিখিত ছ’টি জেলায় তারা ছিল সংখ্যাগুরু এবং মোট জনসংখ্যার ৭৫% ছিল নমঃশূদ্র। পেশার দিক থেকে তারা ছিল কৃষিজীবী এবং অন্যান্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কিন্তু সমাজে তাদের কোনো মর্যাদা ছিল না। শিক্ষা, সম্পত্তি, মন্দিরে প্রবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান প্রভৃতি অধিকার থেকে তার বঞ্চিত ছিল। তারা ছিল উচ্চবর্ণের অত্যাচার ও শোষণের শিকার। এইসব কারণে সামাজিক মর্যাদার অন্বেষণে এই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার সফলাডাঙ্গা গ্রামে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর (১৮১২-৭৮ খ্রিঃ) জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ববঙ্গের নিপীড়িত সম্প্রদায়কে তিনি নতুন জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মধ্যে আত্মশক্তি ও আত্মমর্যাদাবোধের বিকাশ ঘটান। তিনি ‘মতুয়া’ নামে এটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁর পুত্র শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর (১৮৪৭-১৯৩৭ খ্রিঃ) ‘মতুয়া’ আন্দোলন ও মতাদর্শকে জোরদার করে তোলেন। তাঁরা শিক্ষাবিস্তার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নজর দেন। তিনি বলেন “বাঁচি কিংবা মরি তাতে ক্ষতি নেই, গ্রামে গ্রামে পাঠশালা চাই।” তাঁর উদ্যোগে ৩৯৫২ টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, মেয়েদের ধাত্রীবিদ্যা ও নার্সিং ট্রেনিং-ও দেওয়া হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ‘মতুয়া’ নেতৃত্ব উচ্চবর্ণ নিয়ন্ত্রিত জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল না- তারা ব্রিটিশ সরকার ও মুসলিম লিগের সঙ্গেই সম্প্রীতি বজায় রাখত। পরবর্তীকালে প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের (১৯২০-৯০ খ্রিঃ) নেতৃত্বে নমঃশূদ্র আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।