বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদের অবদান উল্লেখ করো

বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদের অবদান উল্লেখ করো
বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদের অবদান উল্লেখ করো।

শৈশব ও আত্মপ্রকাশ

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চিত্তপ্রসাদ। জাতিপ্রথার প্রতি তাঁর নীরব প্রতিবাদকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ও তাঁর ইচ্ছার মর্যাদা দিতে এখানে তাঁর পদবি উল্লেখ করা হল না। ছোটোবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ছিল তাঁর অসম্ভব আগ্রহ। শিল্পী হওয়াটা যেন ছিল তাঁর ভবিতব্য। তবে সেজন্য অবশ্য এই শিল্পীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়নি। ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে ভরতির সময় থেকে চিত্তপ্রসাদ জাতীয় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, আর সেই সময় থেকে আন্দোলন আর প্রতিবাদের ভাষাকে ছবির সাহায্যে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে তিনি পোস্টার-ড্রয়িং ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকতে থাকেন।

পঞ্চাশের মন্বন্তরের যন্ত্রণার অনন্য শিল্পী

১৯৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দে পরাধীন ভারত ছিল দুর্ভিক্ষ ও মহাযুদ্ধপীড়িত। সেসময় পঞ্চাশের মন্বন্তরের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের অবস্থা হয়ে ওঠে দুর্দশাগ্রস্ত ও অনাহারক্লিষ্ট। এই ভয়াবহ সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে চিত্তপ্রসাদ গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে তাঁর ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে সেইসব বুভুক্ষু অসহায় মানুষদের সংকটময় অবস্থার ছবি তুলে ধরেন। তিনি ছবিতে মূলত কালো কালির ব্যবহার করতেন। তাঁর ছবিতে আলোছায়ার দ্বন্দ্বে দুর্যোগের সময় আর মর্মান্তিক চেহারা প্রকাশিত হত।

মানুষের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের চিত্রকর

দুর্ভিক্ষের পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলনের ছবি এঁকেছেন। তেভাগা আন্দোলনের সময় তিনি বাংলায় উপস্থিত থাকলে হয়তো এমন কিছু ছবি পাওয়া যেত, যা বাংলার চিত্রকলায় সম্পদ হয়ে থাকত। তাঁর ছবির মধ্যে ‘তেভাগার প্রতিরোধ’, ‘ফসলের অধিকার’ শিরোনামের ছবি দুটি উল্লেখযোগ্য। চিত্তপ্রসাদের ছবিগুলির মধ্যে আন্দোলনের সময়কার এক জোরালো প্রতিবাদের জীবন্ত আবহ লক্ষ করা যায়। পঞ্চাশের মন্বন্তর ছাড়াও তাঁর আঁকা ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহ এবং তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময়কার ছবিগুলি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

Leave a Comment