বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখো

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখো
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখো।

নিজস্বতার সন্ধান

যামিনী রায় বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করে শুধুমাত্র মেধা ও ধী-শক্তির জোরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচিত হন। স্কুলের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তিনি কলকাতার আর্ট স্কুলে ভরতি হন এবং সেখানে ১৯০৩ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিল্পকলা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর আঁকার হাত এত ভালো ছিল যে, ছাত্রাবস্থাতেই তার ছবি আর্ট স্কুলের দেয়ালে বাঁধিয়ে টাঙিয়ে রাখা হত। তিনি প্রথমে ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির স্বাভাবিকতাবাদী রীতিকে অনুসরণ করেন। যদিও কিছুদিন পরে পক্ষ বদলে ফরাসি ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের মতো শিল্পচর্চা শুরু করেন। কিন্তু ক্রমশ তিনি টের পান, এ ধরনের চিত্রচর্চায় তাঁর মৌলিকতার প্রতিফলন ঘটছে না। তখন তিনি লৌকিক চিত্রকলাকে নিজস্ব চিত্রচর্চার অংশ করে তোলেন।

পটচিত্র নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা ও সিগনেচার স্টাইল

বিশেষত পটচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি সে বিষয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাট প্রভৃতি অঞ্চলের পট সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এইসব নিয়ে দীর্ঘ অনুশীলনের পর তিনি একটি চিত্রভাষা অর্জন করেন। যামিনী রায় প্রাচীন পটের গায়ে আঁকা ছবি, পাটাচিত্র, আলপনার ঢং, মাটির তৈরি হরেক রকমের পুতুলঘোড়া, খেলনা, মানুষ ইত্যাদি সব কিছু থেকেই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করে নিয়েছিলেন। তিনি গণেশজননী, রাধাকৃয়, মা ও শিশু, কৃষ্ণ ও গোপিনী, জিশুখ্রিস্ট – ইত্যাদি ধর্মীয় বিষয় এবং কাহিনি কিংবা লোকাচার ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত প্রসঙ্গ নিয়ে বহু ছবি এঁকেছেন।

বিভিন্ন চিত্রকর্মের নাম ও পরিচয়

সমতল রঙে আঁকা ছবিগুলি যামিনী রায়ের মা ও শিশু নিজস্ব স্বাক্ষর বহন করে। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলি হল- ‘সাঁওতাল মা ও দুই ছেলে’, ‘কনে ও তার দুই সঙ্গী’, ‘ক্রন্দসী মাছের সঙ্গে দুই বিড়াল’ প্রভৃতি। অবনীন্দ্রনাথ কিংবা নন্দলাল বসুর মতো তাঁর আঁকা ছবিও একবার দেখলেই চেনা যায়।

Leave a Comment