বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো
বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো।

প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের গবেষণা ও বিজ্ঞানপ্রতিভা

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নামটি একসময় বাঙালিদের মুখে মুখে ফিরত ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’ ও তার উৎপাদিত নানান জিনিসের সুবাদে। ড. রায় সারাজীবন শুধু বিজ্ঞানচর্চায় নিজেকে আবদ্ধ না-রেখে বাংলার ও বাঙালির সামগ্রিক উন্নতির বিষয়ে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। দেশীয় শিল্পের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ে তাঁর প্রয়াস এবং অবদান অনস্বীকার্য। প্রফুল্লচন্দ্র ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বিলেতে যান এবং সেখানে বিএসসি পাস ৪ করেন। রসায়নশাস্ত্রে মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি ডিএসসি ডিগ্রি ও ‘হোপ’ পুরস্কার পান। এরপর ১৮৮৮-তে দেশে ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই অকৃতদার মানুষটি নিজেকে বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য মৌলিক গবেষণা খাবারের ভেজাল নির্ণয়ে রাসায়নিক পদ্ধতির উদ্ভাবন।

আবিষ্কার, শিল্পোদ্যোগ  ও বহুমুখী কর্মকাণ্ড

‘মারকিউরাস নাইট্রাইট’ আবিষ্কার প্রফুল্লচন্দ্রের যুগান্তকারী গবেষণা, যা তাঁকে ‘মাস্টার অফ নাইট্রেট’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। এ ছাড়া, পারদ সংক্রান্ত এগারোটি মিশ্র ধাতু আবিষ্কার করে তিনি রসায়ন জগতে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। গবাদিপশুর হাড় গুঁড়িয়ে তাতে সালফিউরিক অ্যাসিড যোগ করে তিনি সুপার ফসফেট অফ লাইম তৈরি করেন। তবে গবেষণার মধ্যে নিজেকে আটকে না-রেখে তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করতেন শিল্পপ্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করে। ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও তিনি সমবায় সমিতি ও কৃষিঋণ দান সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। ‘ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনুপ্রেরণা ও অর্থসাহায্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নিরলস কর্মযোগী বিজ্ঞানসাধকের গ্রন্থসম্ভার

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব প্রফুল্লচন্দ্র বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে তাঁর আত্মচরিত ‘Life and Experience of a Bengal Chemist’ ছাড়া ‘বাঙ্গালির মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার’, ‘অন্ন সমস্যায় বাঙ্গালির পরাজয় ও তাহার প্রতিকার’ ও ‘History of Hindu Chemistry’-র নাম উল্লেখযোগ্য।

Leave a Comment