বাঙালির বিজ্ঞানসাধনায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আলোচনা করো

বাঙালির বিজ্ঞানসাধনায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আলোচনা করো
বাঙালির বিজ্ঞানসাধনায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আলোচনা করো।

অসামান্য বৈজ্ঞানিক প্রতিভা

আধুনিক পদার্থবিদ্যার শ্রেষ্ঠতম প্রতিভাদের মধ্যে অন্যতম ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একজন প্রধান দিশারি হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। অসাধারণ মেধাসম্পন্ন সত্যেন্দ্রনাথ প্রথমে হিন্দু স্কুল এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পাস করে তরুণ অধ্যাপকরূপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় তিনি ‘প্লাঙ্ক সূত্র ও আলোকতত্ত্বের কোয়ান্টাম প্রকল্প’ নামে একটি চার পৃষ্ঠার প্রবন্ধ লিখে ইংল্যান্ডের ‘ফিলজফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ পাঠান, কিন্তু ওই পত্রিকা অফিস সত্যেন্দ্রনাথের প্রবন্ধটি বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে তিনি প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের কাছে পাঠান, যা একটি জার্মান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান তত্ত্ব’ হিসেবে সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্বের জনক হিসেবে সত্যেন্দ্রনাথ বোসের নাম চিরস্মরণীয় হয়। আজ থেকে বহু বছর আগে সত্যেন্দ্রনাথের কল্পিত তত্ত্বের গণনা নীতি মেনেই সার্নের কণাটি আবিষ্কৃত হয়। এইজন্য হিগস কণাটি বসুকণা বা ‘বোসন’ নামে পদার্থবিদ্যায় পরিচিতি পেয়েছে।

গবেষক ও অধ্যাপক হিসেবে অবদান

কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে সত্যেন্দ্রনাথ বসু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের ‘খয়রা অধ্যাপক’ পদে যোগদান করেন। এরপর ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন এবং অবসরগ্রহণের পর এমেরিটাস অধ্যাপক পদ অলংকৃত করেন। এ ছাড়া তিনি স্বল্পকাল বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদের দায়িত্বভার নেন এবং ভারত সরকারের অনুরোধক্রমে আমৃত্যু ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে নিযুক্ত থাকেন। পূর্ণিমা সিনহা, মণি ভৌমিক, রতনলাল ব্রহ্মচারী, পার্থ ঘোষ, অসীমা চ্যাটার্জীর মতো স্বনামধন্য গবেষক, অধ্যাপক ও বৈজ্ঞানিকেরা হলেন তাঁরই ছাত্র। 

অন্যান্য ভূমিকা

অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন এই বৈজ্ঞানিক ভারতীয় কৃষি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এবং বাংলায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ ‘বিশ্ব পরিচয়’ উৎসর্গ করেছিলেন এই বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বকে।

Leave a Comment