বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য – ভারতীয় শ্রমিকরা অশিক্ষিত নিরক্ষর হলেও তাদের আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। ড. নির্বাণ বসু বলেন যে, ১৯৩০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপকভাবে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য পড়ে নেওয়া যাক।
বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
![]() |
বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য |
বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
- ভারতীয় শ্রমিকরা অশিক্ষিত নিরক্ষর হলেও তাদের আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। ড. নির্বাণ বসু বলেন যে, ১৯৩০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপকভাবে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। শ্রমিকদের সমর্থনে সভা-সমিতি অতি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়। শ্রমিকরা উপলব্ধি করে যে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে আছে। ড. নির্বাণ বসু বলেন যে, “জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে এক বিরাট বিস্ফোরক শক্তির সন্ধান পায় শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে।”
- শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব শ্রমিকরা দেয়নি- শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতারাই ছিলেন এই আন্দোলনের নেতা।
- ভারতীয় শ্রমিকরা সাধারণত শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের আন্দোলন পরিচালনা করত-হিংসার ঘটনা ঘটত কদাচিৎ।
- ড. বসু বলেন যে, ১৯৩০-এর আগে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলি ছিল ‘স্ট্রাইক কমিটি’মাত্র। এগুলি ধর্মঘটের ঠিক আগে গড়ে উঠত এবং ধর্মঘট শেষ হলে এর অস্তিত্বও বিলুপ্ত হত। কিন্তু ১৯৩০ থেকে কিছু কিছু স্থায়ী ইউনিয়ন গড়ে উঠতে শুরু করে। এই সব ইউনিয়নের অফিস, কর্মসমিতি ও পদাধিকারী ছিল।
সীমাবদ্ধতা
প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বে ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়।
- ভারতীয় শ্রমিকদের মধ্যে শ্রেণি-সংগ্রাম বা শ্রেণি-চেতনা গড়ে ওঠেনি। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দও শ্রেণি-সংগ্রামে বিশ্বাসী ছিলেন না। শ্রমিকরা তখন বহু ভাষা, ধর্ম ও আঞ্চলিক চেতনায় আবন্ধ ছিল। মালিকরা এই সব বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে বিভেদ গড়ে তুলত।
- শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব ছিল বহিরাগত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতে। এই সব নেতারা নিজেদের দলীয় স্বার্থে আন্দোলন পরিচালনা করতেন- নীতি-নির্ধারণ বা আন্দোলনের রণকৌশল নির্ধারণে শ্রমিকদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। দেশীয় মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় নেতারা অনেক সময়েই বাধ্য হয়ে শ্রমিক-স্বার্থ ক্ষুন্ন করে মালিকের স্বার্থ দেখতেন।
- বৃহৎ শিল্প অর্থাৎ যেখানে বহু শ্রমিক কাজ করে সেখানেই ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠে। মাঝারি বা ক্ষুদ্রায়তন শিল্পে শ্রমিকরা অসংগঠিতই থেকে যায়।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।