 |
ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন বলা হয় কেন
|
অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে শিল্প-বাণিজ্যে ভারত ছিল সমৃদ্ধিশালী। সে যুগের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলার গভর্নর ভেরেলস্ট বলেছেন যে, “কৃষকরা ছিল সুখী, কারিগরদের উৎসাহ দেওয়া হত, বণিকরা ধনী ছিল এবং রাজা ছিলেন তৃপ্ত।” এ সময় বাংলার সুতি, রেশম বস্ত্র, কাঁচা রেশম, চিনি, লবণ, পাট, সোরা, আফিম বিদেশে রপ্তানি হত। বিদেশের বাজারে ঢাকার মসলিনের চাহিদা ছিল প্রবল। বাংলা ছাড়াও বারাণসী, লক্ষ্মৌ, আগ্রা, লাহোর, মূলতান, আমেদাবাদ, ব্রোচ, মাদুরা প্রভৃতি স্থান সুতিবস্ত্রের বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। বিদেশের বাজারে বারাণসী ও আমেদাবাদের কিংখাব, কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের পশমের শালের ব্যাপক চাহিদা ছিল। লোহা, তামা, রূপা, সোনা প্রভৃতি ধাতুদ্রব্যের জন্য ভারত বিখ্যাত ছিল। ভারতের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের খ্যাতি সারা বিশ্বে প্রচারিত ছিল। ভারতের মশলা ও সুতিবস্ত্রের চাহিদা ছিল বিশ্বের সর্বত্র। বিদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ভারতে শিল্পোন্নয়নও প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। ইউরোপের বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা এত ব্যাপক ছিল যে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশে ভারতীয় পণ্যের আমদানি রুখতে নানা ধরনের আইন কানুন প্রবর্তন করে। ভারতীয় পণ্যের ওপর নানা প্রকার শুল্ক আরোপ করে।
ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হলে ভারতীয় অর্থনীতি ইংরেজদের স্বার্থে পরিচালিত হতে থাকে। ভারতীয় শিল্পোৎপাদকদের ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি- সবটাই 4 ইংরেজ সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। শিল্পবিপ্লবের পর অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড-জাত পণ্যাদি জলস্রোতের মতো এবং বিনাশুল্কে ভারতে প্রবেশ করতে থাকে। আর ভারত থেকে ইংল্যান্ডে রপ্তানিকৃত দ্রব্যাদির ওপর চাপান হয় বিরাট করের বোঝা। ১৭৮০ তে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে রপ্তানিকৃত দ্রব্যাদির মূল্য ছিল ৩ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ড। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তার আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮০ লক্ষ পাউন্ড। এর ফলে ধীরে ধীরে ভারতীয় শিল্পী ও শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। এতদিন ভারত ছিল রপ্তানিকারক দেশ, কিন্তু তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের নীতির ফলে ভারতের বাজার ইংল্যান্ডজাত বিদেশি পণ্যে ভরে যায়। ভারত একটি আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়।