ভারতে কীভাবে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল

ভারতে কীভাবে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
ভারতে কীভাবে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
বণিকের মানদণ্ড থেকে রাজদণ্ডে পরিণত হওয়ার অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। মূলত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল ইংরেজ কোম্পানি। ভারতের সঙ্গে একচেটিয়া বাণিজ্য পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০০ খ্রি.)। অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বিনা শুল্কে ব্যবসার অধিকার পেল (১৭১৭ খ্রি.)। বাংলা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই-এ দস্তক ব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানির বাণিজ্যিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বাংলাকে কেন্দ্র করে ভারতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রথম পর্ব

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। এই সময়ে ক্লাইভের বিচক্ষণতায় ইস্ট ইন্ডিয়া ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে না গিয়ে দিল্লির পরাজিত মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে নিজেদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিকে সংহত ও সুদৃঢ় করে তোলে। এরপর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাকে কেন্দ্র করে ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনে সচেষ্ট হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজস্ব এবং নতুন নতুন এলাকা জয় করে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা ও তা ইংল্যান্ডে প্রেরণ করা।

দ্বিতীয় পর্ব

লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকালে ইংরেজ কোম্পানি সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যের মহীশূর রাজ্য জয় করে। পরবর্তী সময়ে ‘দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা’ যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি কটক, বালেশ্বর, গঙ্গা-যমুনার দোয়াব অঞ্চল, রাজপুতানার উত্তরাঞ্চল, ভারচু, আহম্মদনগর প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন। এছাড়া এই সময়কালে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে একে একে হায়দ্রাবাদের নিজাম রাজ্য, অযোধ্যা, সুরাট, পুণা, সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, হোলকার রাজ্য এবং কূটনীতি ও ছলনার মাধ্যমে তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাটক রাজ্য কোম্পানি হস্তগত করে।

তৃতীয় পর্ব

লর্ড ডালহৌসির শাসনকালে ইংরেজ কোম্পানি সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে প্রোম ও পেগুসহ সমগ্র দক্ষিণ ব্রহ্মদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্য; স্বত্ববিলোপ নীতিকে কঠোরভাবে কার্যকর করে সাতারা, জৈৎপুর, সম্বলপুর, বাগৎ, ভগৎ, উদয়পুর, করৌলি, ঝাঁসি, নাগপুর, কর্ণাটক, ভোঁসলে ও তাঞ্জোর রাজ্য; কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা রাজ্য এবং অন্যান্য অজুহাতে সিকিমের একাংশ ও নিজাম রাজ্যের বেরার অঞ্চল দখল করে নেয়। ডালহৌসির সময় ব্রিটিশ শাসন সর্বভারতীয় চরিত্র ধারণ করে।

সংহতি সাধন

সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড থেকে ভারতস্থ ইংরেজ কোম্পানির প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাংবিধানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রেগুলেটিং অ্যাক্টের (১৭৭৩ খ্রি.) ও পিটের ভারতশাসন আইনের (১৭৮৪ খ্রি.) মাধ্যমে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপিত হয়। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে প্রশাসন, বিচার-বিভাগ, সামরিক বাহিনী, দক্ষ আমলাতন্ত্র ও পুলিশি ব্যবস্থার কাঠামো নির্মিত হয়।

Leave a Comment