“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”- উদ্ধৃত উক্তিটির তাৎপর্য যথাযথ বর্ণনা করো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত উদ্ধৃত উক্তিটি ‘ছুটি’ গল্পের মুখ্য কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিকের। মামার বাড়িতে মামির অত্যাচারে ফটিকের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। মামা বিশ্বম্ভরবাবু বলেছিলেন যে স্কুলের ছুটি হলে ফটিককে নিয়ে দেশের বাড়ি যাবেন। কিন্তু চারিপাশের পরিবেশ ক্রমশ বিরুদ্ধ হওয়ার কারণে স্কুলের ছুটির অপেক্ষা না করে ফটিক একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ফটিককে পুলিশ বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। দুজন পুলিশের লোক ধরাধরি করে ফটিককে গাড়ি থেকে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর কাত্রে ফটিকের জ্বর অত্যন্ত বেড়ে – যায়। সে বিড়বিড় করে বকতে থাকে- “মা, আমাকে মারিস নে মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করিনি।” বিশ্বম্ভরবাবু ফটিকের মনের ভাব বুঝতে পেরে মৃদুস্বরে বলেন- “ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।”
ফটিকের অসুস্থতার খবর পেয়ে গ্রাম থেকে ফটিকের মা ছুটে আসেন। বিশ্বম্ভরবাবু বহুকষ্টে তার ভগিনীর শোকোচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করেন। মা ফটিকের শয্যার উপর আছাড় খেয়ে পড়ে উচুস্বরে ডাকলেন- “ফটিক! সোনা! মানিক আমার!” ফটিকের অতি সহজ উত্তর পেয়ে মা আবার ডাকলেন- “ওরে ফটিক, বাপধন রে!” ফটিক তখন আস্তে আস্তে পাশ ফিরে কাউকে লক্ষ না করে অতি মৃদুস্বরে বলল,-“মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”
এখানে ছুটি বলতে পৃথিবীর পাঠশালা থেকে ছুটি বা মুক্তি বোঝানো হয়েছে। এই ছুটি হল এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়া, অর্থাৎ ইহলোক থেকে পরলোকে যাওয়া।
আরও পড়ুন – নদীতীরে বালকদের খেলার দৃশ্যটি বর্ণনা করো