![]() |
শিল্পবিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তার ফলাফল বিশ্লেষণ করো। |
ভূমিকা
যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দিক হল খাল খনন, রাস্তাঘাট ও বন্দরের উন্নয়ন, রেল ব্যবস্থার প্রবর্তন ও প্রসার এবং টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন।
খাল নির্মাণ
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে ও ফ্রান্সে শিল্প কেন্দ্রের সঙ্গে বাণিজ্য কেন্দ্র ও খনিজ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে যথাক্রমে রেল ও খাল খননের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিশ্ব অর্থনীতিতে এরূপ একটি পরিকল্পনা ছিল সুয়েজ খাল খননের প্রচেষ্টা।
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ
বিভিন্ন পরিকল্পনা ও তার ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খাল খনন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় এবং দশ বছর ধরে খননকার্য চলার পরে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ জলপথ যোগাযোগের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়।
সুয়েজ খালের গুরুত্ব
সুয়েজ খালটি বর্তমানে ১০১ মাইল লম্বা, ৩২ ফুট গভীর ও ১৪৪ ফুট চওড়া। স্বাভাবিক কারণেই এই কৃত্রিম জলপথ ছিল বিশ্ববাণিজ্য ও শিল্পবিপ্লবের প্রসারে খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ- ১ এটি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্যে যোগসাধনকারী জলপথ; তাই এর ফলে ইউরোপ-এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২ এই কৃত্রিম জলপথের মাধ্যমে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি কর্তৃক তা এশিয়া ও আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে গতি সঞ্চার করেছিল।
রেল ব্যবস্থার প্রবর্তন
ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল রেলপথ, যা একই সঙ্গে শিল্পবিপ্লবের অগ্রগতি ঘটিয়েছিল, তেমনি তার সম্প্রসারণেও সাহায্য করেছিল।
ইউরোপে রেলপথের সম্প্রসারণ
ইউরোপে রেলপথ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ছিল পথিকৃৎ, এবং ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের লিভারপুল থেকে ম্যাঞ্চেস্টার পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়েছিল।
ইংল্যান্ডে রেলপথ প্রবর্তনের পর বেলজিয়ামে (১৮৩৫ খ্রি.), ফ্রান্সে (১৮৩৭ খ্রি.), জার্মানিতে (১৮৩৫ খ্রি.) এবং রাশিয়াতে (১৮৩৮ খ্রি.) রেলপথের প্রবর্তন হয়। এভাবে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
গুরুত্ব
ইউরোপে রেলপথের সম্প্রসারণের ফলে-
(১) এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ স্থাপিত হয়,
(২) অন্তর্দেশীয় ও বহির্দেশীয় বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে এবং
(৩) শিল্পবিপ্লবের সম্প্রসারণ ঘটে।
টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন
টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে-১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম এফ. কুক এবং চার্লস হুইটস্টোন ইংল্যান্ডের ইউস্টন রেলস্টেশন থেকে ক্যামডেন রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রথম টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রচলন করেন। অবশ্য ইতিপূর্বে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্যামুয়েল মর্স ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল সহযোগে বার্তা-মুদ্রিত টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেছিলেন।
টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিস্তার
প্রথম দিকে টেলিগ্রাফ সরকারি কাজে ব্যবহৃত হলেও ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘কুক ও { হুইটস্টোন’ তা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সমগ্র ইংল্যান্ডে সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পৃথিবী জুড়ে ২,৪১,৫০০ কিমি এলাকা জুড়ে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথমে টেলিগ্রাফ আরও উন্নত হয় এবং যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে।
গুরুত্ব
টেলিগ্রাফ যোগাযোগের দুটি ফলাফল হল-
(১) ইংল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ স্থাপিত হয় অর্থাৎ বিশ্বের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠে,
(২) টেলিগ্রাফ যোগাযোগের ফলে দূর দেশে ব্যাবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বা সৈন্যবাহিনী পরিচালনা বা উপনিবেশের সম্প্রসারণও সম্ভব হয়।
উপসংহার
এভাবে রেলপথের প্রবর্তন, সুয়েজ খাল নির্মাণ ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তনের মাধ্যমে উনিশ শতকের মধ্যেই শিল্পবিপ্লব বিশ্বে সম্প্রসারিত হয় ও বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা হয়।