শ্যামল মাটির ধরাতলে” এবং “এই যে মধুর আনাগোনা”- শব্দবন্ধ দুটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। অথবা, রবীন্দ্রগানে স্বর্গ-মর্ত্যের সংযোগটি কীরূপ

লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথের গানের শ্রেষ্ঠত্বের কথা ব্যক্ত করেছেন ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে।

শ্যামল মাটির ধরাতল

রবীন্দ্রসংগীতের সুর, তাল, লয়ের প্রসঙ্গ ছাড়িয়ে লেখক শব্দচয়নের দিকটিতে স্বতন্ত্ররূপে আলোকপাত করেছেন। শব্দের অপ্রতিরোধ্য অপার ক্ষমতাকে নানাভাবে কাজে লাগিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। এক হৃদয় থেকে আর-এক হৃদয়ে সঞ্চার করার ক্ষেত্রে গানের বাণীকে চিরকালীন সম্পদে উত্তীর্ণ করেছেন। “আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার…” গানটিতে আকাশের অসীমতার দিকে মনকে ধাবিত করেছেন, স্বর্গের নব নব চেতনার রঙে নিজেকে আলোকিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভাব থেকে বস্তুর জগতে পৌঁছোতে একটুও বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। কত সহজেই আমরা সত্যের মুখোমুখি হই এই ‘শ্যামল মাটির ধরাতলে’। তাই মাটির পানে ফিরে আসার কথা বলেছেন কবি। গানটির বাণীবিন্যাসে বিজ্ঞানচেতনা ও দার্শনিক ভাবনার মেলবন্ধন ঘটেছে। গানটির শুরুতে অরূপময়তা বা অসীমতার কথা থাকলেও কবি মাটির পানে ধাবিত হয়ে সীমায় আবদ্ধ থেকেছেন। দেবতাকে নয়, মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এই যে মধুর আনাগোনা

কবিগুরু বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবজীবনের মধ্যে একটা সেতু নির্মাণ করে অখণ্ডতা পরিপূর্ণতা দান করেছেন। স্রষ্টা ও সৃষ্টি, বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবজীবন আসলে বিশ্বদেবতার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা বলে উপলব্ধি করেছেন। মানবপ্রীতি কবির অরূপ অনুভূতির দ্বারা গভীরভাবে সিক্ত। অরূপ বোধের সঙ্গে মিশ্রিত মানবপ্রীতি, দুঃখ ও মৃত্যুকে অস্বীকার করে এক নব জীবনবোধে কবিকে উন্নীত করেছে। তাই এই যাওয়া-আসা তাঁর ‘মধুর’ বলে মনে হয়েছে। মর্ত্য ছেড়ে কল্পনার স্বর্গরাজ্যে যেতে যে আনন্দানুভূতি হয়, স্বপ্নরাজ্যে থেকে বাস্তব, নৈসর্গিক এই পৃথিবীর বুকে ফিরে আসতেও ঠিক ততটাই ভালো লাগে।

Leave a Comment