সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো – ১৯৩২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়লেন সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাগুরু বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো পড়ে নেওয়া যাক।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র

পৃথিবীর সব দেশেই স্বাধীনতা আন্দোলন অহিংস ও সহিংস দুটি পথেই পরিচালিত হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশমাতার মুক্তির উদ্দেশ্যে বোমা-পিস্তল হাতে নিয়ে সশস্ত্র পথে একদল তরুণ-তরুণী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিশ শতকের সূচনায় বাংলার বুকে বিপ্লববাদের পদধ্বনি শোনা যেতে থাকে। সূচনাপর্বে ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তর’ দল এইসব কাজকর্ম শুরু করলেও এর সঙ্গে মেয়েদের কোনোভাবেই যুক্ত করা হত না। ভগিনী নিবেদিতা এবং সরলাদেবী চৌধুরাণী-র সঙ্গে বিপ্লবীদের গোপন যোগাযোগ থাকলেও সাধারণভাবে মেয়েদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হত। বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশি বলেন যে, মেয়েদের রাজনৈতিক শিক্ষা বা সামাজিক অধিকার না থাকায় তাদের দলে নেওয়া হত না। তবে মা, বোন, বৌদি, স্ত্রী হিসেবে বহুক্ষেত্রে তাঁরা পলাতক বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিতেন, পিস্তল বা রিভালবার লুকিয়ে রাখতেন বা অন্যত্র পৌঁছে দিতেন এমনকী গোপনে চিঠিপত্র আদান প্রদান করতেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বিপ্লবকর্মে মেয়েদের অংশগ্রহণের নজির পাওয়া যেতে থাকে। 

  • বীরভূমের ঝাউতলা গ্রামের দুকড়িবালা দেবী (১৮৮৭-১৯৭০ খ্রিঃ) নিজের বাড়িতে রডা কোম্পানি-র ৭টি পিস্তল ও এক বাক্স কার্তুজ লুকিয়ে রেখেছিলেন। এই অপরাধে তাঁর দু’বছরের কারাদন্ড হয়। বিপ্লবী দলের কাজে তিনিই দন্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় মহিলা।
  • বিপ্লবীদের ‘পিসিমা’ হাওড়ার বালবিধবা ননীবালা দেবী সংসারের কর্ত্রী সেজে পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। দেশের প্রয়োজনে তিনি সিঁথিতে সিঁদুর পরতেও কুণ্ঠিত হননি। পুলিশ তাঁকে পেশোয়া থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি হলেন ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ নং আইনে সাজাপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা রাজবন্দী। 
  • ময়মনসিংহের ক্ষীরোদসুন্দরী চৌধুরী পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের ঘর সংসার ফেলে সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, ক্ষিতীশ চৌধুরী, যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিপ্লবীদের মা সেজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। 
  • আবার এমন উদাহরণও অনেক আছে যে, মেয়েরা নিজ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেরাই বিপ্লবকর্মে অগ্রসর হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় লীলা নাগের (১৯০০-৭০ খ্রিঃ) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালি সংঘ’-র কথা বলা যায়। নারী জাগরণ ও নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের বেশ কিছু কর্মধারা ও শাখা সংগঠন ছিল। স্কুল, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বয়স্ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রীনিবাস ছাড়াও ব্যায়ামচর্চা ও ছাত্রী সংগঠন গড়ার কাজেও তারা যুক্ত ছিল। কলকাতাতে এর একটি শাখা ছিল। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালি ছাত্রী সংঘ’ ঢাকা ও কলকাতায় ছাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনার সঞ্চার করে। এটি ছিল ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন। ১৯৩০ সালে কলকাতার গোয়াবাগানে গড়ে ওঠে ‘ছাত্রী ভবন’- ছাত্রী ও কর্মী-মহিলাদের বাসস্থান। পরে এটি বিপ্লবী নারীদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসে ডালহৌসি স্কোয়ারে পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের ওপর গুলি চললে ‘ছাত্রী ভবন’-এর বহু আবাসিককে গ্রেপ্তার করা হয়। 
  • বাংলা তথা ভারতের বিপ্লব আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-৩২ খ্রিঃ) ও কল্পনা দত্ত (১৯১৩-৯৫ খ্রিঃ), বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস (১৯১১-৮৬ খ্রিঃ) এবং শান্তি ঘোষ (১৯১৬-৮৯ খ্রিঃ) ও সুনীতি চৌধুরী (১৯১৭-৮৮ খ্রিঃ)-র অবদান ভুলবার নয়। চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত ছিলেন বেথুন কলেজের ছাত্রী এবং ‘ছাত্রী সংঘ’-র সদস্যা। তাঁরা উভয়েই সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম মহাবিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘মাস্টার-দা’ জগৎক দেখাতে চেয়েছিলেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। তাই তিনি এই দুই অগ্নিকন্যার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাহাড়তলি ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২) পরিকল্পনা করেন। এর এক সপ্তাহ আগেই কল্পনা দত্ত গ্রেপ্তার হয়ে যান। প্রীতিলতার নেতৃত্বে এই অভিযান সফল হয়। কিন্তু এই বীরাঙ্গনা আত্মহত্যা করেন। জগত দেখল যে, বাংলার মেয়েরাও প্রয়োজনে সশস্ত্র বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে পারে। শুধু কী এই? ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কুমিল্লার দুই স্কুল-ছাত্রী- শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী-র গুলিতে নিহত হলেন কুমিল্লার জেলা শাসক স্টিভেন্স। ১৯৩২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়লেন সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাগুরু বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস। এমন শত শত অগ্নি-কন্যার কাহিনীতে পূর্ণ আমাদের মুক্তি সংগ্রাম।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment