সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিতর্ক আলোচনা করো

ভূমিকা
খ্রিস্টীয় নবম শতকে ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্যের পতনের যুগে পশ্চিম ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। তবে সামন্ততন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটে খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে। সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি বা উদ্ভব সম্পর্কে বিতর্কের প্রথম সূত্রপাত ঘটে অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে। ফরাসি ঐতিহাসিক আবে দুবো এবং বোলাঁভিয়ের সামন্ততন্ত্রের উৎস হিসেবে যথাক্রমে রোমান তত্ত্ব ও জার্মান তত্ত্ব তুলে ধরেন।
(1) রোমান তত্ত্ব: সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব সম্পর্কে রোমান তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন আবে দুবো। তিনি বলেছেন প্রাচীন রোমে ‘অনুগামী-পৃষ্ঠপোষক প্রথা’ (Client Patron System) নামে এক প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে, প্রাচীন রোমে কোনো ভূস্বামী বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির কাছে একদল ভূমিহীন কৃষক, বেকার, এমনকি তাঁর পরিবারের সদস্যরাও আশ্রয়, ভরণপোষণ বা অন্যান্য কারণে শরণাপন্ন হতেন। তাদের এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ভূস্বামী বা ক্ষমতাবান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের ওপর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেন। এইভাবে গড়ে উঠেছিল অনুগামী (Client) ও ‘পৃষ্ঠপোষকের’ (Patron) সম্পর্ক। দুবোর মতে, এই রোমান ‘অনুগামী-পৃষ্ঠপোষক প্রথা’ থেকেই ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।
(2) জার্মান তত্ত্ব : সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে জার্মান তত্ত্ব-এর মূল প্রবক্তা হলেন বোলাঁভিয়ের। তাঁর মতে, জার্মানির ‘কমিটেটাস প্রথা’ (Comitatus) থেকেই সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে। তিনি বলেছেন, এই প্রথা অনুসারে একদল স্বাধীন যোদ্ধা স্বেচ্ছায় কোনো ক্ষমতাবান উপদলীয় বা সামরিক নেতার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতেন। এর বিনিময়ে তাঁরা এই স্বাধীন যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতেন। তাঁর মতে, খ্রিস্টীয় নবম শতকে পশ্চিম ইউরোপের অরাজকতার যুগে এই ‘কমিটেটাস প্রথা’ থেকেই সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।
মূল্যায়ন
সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবে রোমান বা জার্মান উপাদানের মধ্যে কোল্টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এই বিতর্কের আজও অবসান হয়নি। যদিও ঐতিহাসিক পেরি অ্যান্ডারসন অবশ্য এই বিতর্কটিকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তথাপি সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের পশ্চাতে তৎকালীন নানা রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের পাশাপাশি এই দুটি উপাদানেরও যে যথেষ্ট ভূমিকা ছিল, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর