সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝ
অথবা, সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা দাও

ভূমিকা
খ্রিস্টীয় নবম শতকের মধ্যভাগে ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্যের অবক্ষয় এবং নানা বর্বর জাতির আক্রমণের ফলে পশ্চিম ইউরোপে এক চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগে স্থানীয় ভূস্বামী ও সামরিক নেতৃবর্গ ক্রমশই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। এঁরা পরিচিত হন সামন্তপ্রভু হিসেবে। এইভাবে ইউরোপে ‘সামন্ততন্ত্র’-এর উত্থান ঘটে।
সংজ্ঞা
ইংরেজি ‘ফিউডালিজম’ (Feudalism) কথাটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘ফিওডালিস’ (Feodalis) ও ফরাসি ‘ফিওডালিতে’ (Feodalite) শব্দ থেকে। এর বাংলা প্রতিশব্দ বা অর্থ হল সামন্ততন্ত্র। মার্ক ব্লখ আবার সামন্ততন্ত্র না বলে ‘সামন্ততান্ত্রিক সমাজ’ (Feudal Society) কথাটি ব্যবহার করার পক্ষপাতী। বহুকাল ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সামন্ততন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অভিমতগুলি হল-
(1) বোলাঁভিয়েরের মত: প্রখ্যাত ফরাসি ঐতিহাসিক বোলাঁভিয়ের সামন্ততন্ত্রকে বিশদে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, সামন্ততন্ত্র হল সার্বভৌম অধিকারের বিভাজন, যেখানে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীভূত করা হয়।
(2) মার্ক ব্লখ-এর মত: ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ তাঁর ‘ফিউডাল সোসাইটি’ গ্রন্থে বলেছেন, সামন্ততন্ত্র হল একটি বিশেষ আর্থসামাজিক সম্পর্ক, যেখানে কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় একজন প্রভাবশালী স্বাধীন ভূস্বামীর আনুগত্য মেনে নেন এবং প্রভুকে সেবাদানের (Service) অঙ্গীকার করেন।
(3) গ্যানশফের মত: ঐতিহাসিক গ্যানশফের মতে, মধ্যযুগে ইউরোপে লর্ড ও ভ্যাসালের মধ্যেকার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে যে ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল, তা সামন্ততন্ত্র নামে পরিচিত।
মূল্যায়ন
সবশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগের ইউরোপে ভূমি বা জমির মালিকানার ওপর ভিত্তি করে যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তা সাধারণভাবে সামন্ততন্ত্র নামে পরিচিত। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভুরাই ছিলেন তার শাসনাধীন অঞ্চলের প্রধান শাসক বা সর্বেসর্বা।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর