সাম্যের বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো

সাম্যের রূপ
সাম্য একটি বহুমাত্রিক ধারণা। সুতরাং, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রকার সাম্যের ধারণার উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
(i) সামাজিক সাম্য
সামাজিক সাম্য হল একটি বাস্তবতা। সাধারণ অর্থে সামাজিক সাম্য বলতে বোঝায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশমর্যাদা, স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকলের সামাজিক ক্ষেত্রে মর্যাদা। এককথায় বলা যায়, সমাজে যখন মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করা হয় না, তখন তাকে সামাজিক সাম্য বলে অভিহিত করা হয়।*1
(ii) রাজনৈতিক সাম্য
রাজনৈতিক সাম্য বলতে বোঝায় স্ত্রী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার ভোগের সমতা। রাজনৈতিক সাম্যই হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার গঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের উপর নির্ভর করে।
(iii) আইনগত সাম্য
উদারবাদী দর্শনে আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আইনগত সাম্যের দুটি মূল বিষয় হল- (a) আইনের দৃষ্টিতে সাম্য (b) আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার। এই দুটি অধিকারকে একত্রে আইনগত সাম্য বলে অভিহিত করা হয়।
(iv) অর্থনৈতিক সাম্য
অর্থনৈতিক সাম্য বলতে দেশের সকল নাগরিকের আর্থিক সুযোগসুবিধা ভোগের সমতাকে বোঝায়। বুর্জোয়া তাত্ত্বিকদের মতে, আয় ও সম্পত্তির অধিকারের সমতাই হল অর্থনৈতিক সাম্য। অধ্যাপক ল্যাস্কি-র মতে, অর্থনৈতিক সাম্য ছাড়া রাজনৈতিক সাম্য মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
(v) সাংস্কৃতিক সাম্য
সাংস্কৃতিক সমতা হল এমন এক ধরনের সমতা যেখানে বহুত্ববাদী সমাজে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সমাজে তাদের সঙ্গে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় না। সাংস্কৃতিক পার্থক্য নির্বিশেষে সকলকে তার সংস্কৃতি বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়।
(vi) লিঙ্গ সাম্য
অক্সফোর্ড অভিধান অনুসারে, লিঙ্গ সাম্য বলতে লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে নারী ও পুরুষের প্রতি সমআচরণ ও সমসুযোগের ধারণাকে বোঝায়। অর্থাৎ অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ ও অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করাই হল লিঙ্গ সাম্য।
(vii) স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক সাম্য
প্রাচীন গ্রিসে স্টোয়িক দার্শনিকরা এবং রোমান চিন্তাবিদ সিসেরো ও পলিবিয়াস প্রমুখ স্বাভাবিক সাম্যের ধারণার প্রচার করেছিলেন। স্বাভাবিক সাম্য বলতে বোঝায় মানুষ জন্ম থেকেই স্বাধীন। প্রতিটি মানুষ সমান অধিকারসম্পন্ন। রুশো-র রচনাতেও স্বাভাবিক সাম্যের সন্ধান মেলে।
(viii) আন্তর্জাতিক সাম্য
আন্তর্জাতিক সাম্য বলতে প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমমর্যাদার ধারণাকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক সাম্যের মূল বক্তব্য হল, ক্ষুদ্র-বৃহৎ নির্বিশেষে সমস্ত জাতিরাষ্ট্রের মর্যাদা ও গুরুত্ব সমান। অধ্যাপক জোহারি-র মতে, এর অর্থ হল বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রকে সমানভাবে দেখা হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমা, অর্থনৈতিক বা সামাজিক শক্তি প্রভৃতিকে আলাদা করে দেখা হবে না।
আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর