সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক লেখো

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক
সাম্য ও স্বাধীনতা এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ, যা বহু যুগ ধরে ত্যাগ স্বীকারের ফলশ্রুতি হিসেবে বিকশিত হয়েছে। বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এই দুটি আদর্শের মধ্যে সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়। ল্যাস্কি বলেছেন, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করাই অসম্ভব। তাঁর মতে, সাম্য ও স্বাধীনতার ধারণাটি পরস্পরের বিরোধী বা পরস্পরের থেকে পৃথক নয়। দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধারণা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হল-
(i) সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক
সাম্য ও স্বাধীনতার দাবিটি প্রথম উচ্চারিত হয় ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের সময়কালে ও ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, যথা-ল্যাস্কি, রুশো, বার্কার, টনি, হবহাউস প্রমুখ এবং মার্কসবাদীগণ সাম্য ও স্বাধীনতার ধারণাকে পরস্পরের পরিপূরক বলে মনে করেন। বলা যায়, সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের তাৎপর্য অপরিসীম। এই তাৎপর্যগুলি হল নিম্নরূপ-
- সাম্য ও স্বাধীনতার পরিবেশে ব্যক্তিসত্ত্বার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে এবং একইসঙ্গে ব্যক্তির সমাজবোধও জাগ্রত হবে।
- আর এইচ টনি মনে করেন, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক মানবতার সম্প্রসারণে সাহায্য করবে।
- ল্যাস্কি বলেছেন, সাম্য ও স্বাধীনতার আদর্শ সমাজে মানুষের সৃজনশীলতাকে কার্যকর করে।
- জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর ‘On Liberty’ গ্রন্থে স্বাধীনতাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতা কখনোই স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর নয়। তাঁর মতে, সমাজকল্যাণের দৃষ্টিতে স্বাধীনতাকে বিচার করলে সাম্যের ধারণাটি উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। তিনি মনে করেন, সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
(ii) সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের বিরোধী
সাম্য ও স্বাধীনতার ধারণাকে পরস্পরের বিরোধী বলেছেন-লর্ড অ্যাক্টন, টকভিল, হারবার্ট স্পেনসার প্রমুখ। তাদের দেওয়া যুক্তিগুলি হল-
- ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী উদারনৈতিক চিন্তাবিদরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য এবং স্বাধীনতার মধ্যে বিরোধিতার কথা বলেন। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীরা শুধুমাত্র স্বাধীনতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
- সাম্য ও স্বাধীনতা সম্পর্কযুক্ত ধারণাটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে ব্যক্তিবিশেষের স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না।
- লর্ড অ্যাক্টন তাঁর গ্রন্থ ‘Lecture on Liberty’-তে বলেছেন, সাম্য অর্জনের অধীর ইচ্ছাই স্বাধীনতার আশাকে ব্যর্থ করে।
মূল্যায়ন
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই ধারণা স্পষ্ট যে, সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক এতটাই নিবিড় একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির কথা ভাবলে উভয়ের ধারণা সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না। তাই সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই প্রকৃত অর্থপূর্ণ সমাজজীবন গড়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর