সিসেরোর পরিচয় সংক্ষেপে আলোচনা করো

সিসেরোর পরিচয় সংক্ষেপে আলোচনা করো

রোমান রাষ্ট্রচিন্তার একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি হিসেবে সিসেরোর নাম একবাক্যে উচ্চরিত হয়। তাঁর সম্পূর্ণ নাম- মার্কাস টুল্লিয়াস সিসেরো।

সিসেরোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

(i) পূর্ব জীবন: রোমের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আরপিনাম (Arpinum)-এ ১০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসেরোর জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন রোমের অশ্বারোহী বাহিনীর একজন অভিজাত সদস্য। সিসেরো মূলত ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা। তবে সুবক্তা এবং আইনজ্ঞ হিসেবেও তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল।

(ii) রাজনৈতিক সংকট: বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সিসেরো মাত্র ৩১ বছর বয়সে স্থানীয় শাসকপদে (কোয়েস্টর) নিযুক্ত হন। এরপর ৪৩ বছর বয়সে উন্নীত হন রোমের সর্বোচ্চ শাসক কনসাল পদে (৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। এই সময় তিনি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ক্যাটিলিন বিদ্রোহীদের (Lucius Sergius Catilina বা Catiline-এর অনুগামীবৃন্দ) বিনা বিচারে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। এজন্য সিসেরোকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য এক বছরের মধ্যেই (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮-৫৭ অব্দ) তিনি দেশে ফেরার অনুমতি পান। কিন্তু জুলিয়াস সিজারের (Julius Caesar) হত্যাকাণ্ডের পর পুনরায় তিনি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সেসময় মার্ক অ্যান্টনির (Mark Antony) বিরুদ্ধে সিসেরো অক্টাভিয়ানকে (Octavian) সমর্থন জানান। কিন্তু রাজনীতির জটিল তত্ত্ব তাঁর অজানা ছিল। শেষপর্যন্ত অ্যান্টনি এবং অক্টাভিয়ান এক গোপন সমঝোতা দ্বারা সিসেরোকে হত্যা করেন (৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। এইভাবে রাজনীতির ঘোলা জলে পড়ে রোমের একজন প্রতিশ্রুতিবান প্রতিভার অকাল বিনাশ ঘটে।

(iii) রাষ্ট্রদর্শনের প্রেক্ষাপট: সমকালীন রোমের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক একজন প্রতিশ্রুতিবান প্রতিভার অকাল বিনাশ ঘটে। সংকটকালে সিসেরো তাঁর রাষ্ট্রতত্ত্ব নির্মাণ করেছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকটও প্রবল আকার ধারণ করেছিল। সুদীর্ঘকাল যুদ্ধ চলার ফলে কৃষি সমস্যা এবং পরবর্তীকালে বেকার সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, রোমের হাতে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসদের সংখ্যাবৃদ্ধি এসময় আঘাত হানে স্বাধীন শ্রমজীবী মানুষের জীবিকায়। উপরন্তু রোমের অভিজাত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত গৃহযুদ্ধের সুবাদে মারিয়াস (Marius), সুল্লা (Lucius Cornelius Sulla), পম্পেই (Gnaeus Pompeius Magnus) ও সিজার (Julius Caeser)-সহ উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিরা সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তৎপর হন। এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটাবস্থার পটভূমিতেই গড়ে ওঠে সিসেরোর রাষ্ট্রদর্শন।

(iv) গ্রন্থ রচনা: রোমের শ্রেষ্ঠ বাগ্মী এবং রাজনীতিবিদ সিসেরোর রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি প্লেটো, অ্যারিস্টটল, পলিবিয়াস ও স্টোয়িকদের মতবাদ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। De Republica (ইংরেজিতে On the Republic) এবং De Legibus (ইংরেজিতে On the Laws) গ্রন্থ দুটি থেকে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। সম্ভবত প্লেটোর অনুকরণে সিসেরো তাঁর গ্রন্থের এরূপ নামকরণ করেছেন। কারণ, প্লেটোরও একই নামের দুটি গ্রন্থ ছিল। তাছাড়া প্লেটোর পদ্ধতিতেই কথোপকথনের ভিত্তিতে সিসেরো তাঁর মতপ্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া De Officiis নামক আর একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করেছিলেন।

আরও পড়ুন – ১। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

২। প্লেটোর সাম্যবাদী তত্ত্বের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করো

৩। রাষ্ট্রচিন্তার জগতে প্লেটোর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

৪। অ্যারিস্টটলের ধারণায় রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ছিল

৫। সরকারের শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের অভিমত আলোচনা করো

৬। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে অ্যারিস্টটলের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

৭। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্ব আলোচনা করো

৮। এপিকিউরীয় ও সিনিক রাষ্ট্রদর্শনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো

৯। টাকা লেখো- দ্বাদশ সারণী

১০। রোমান আইনতত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১১। রাষ্ট্রচিন্তাবিদ পলিবিয়াসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

Leave a Comment