সুলতানি যুগের সুফিবাদের পরিচয় দাও

সুলতানি যুগের সুফিবাদের পরিচয় দাও
সুলতানি যুগের সুফিবাদের পরিচয় দাও
খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতাব্দীতে ভক্তিবাদের মাধ্যমে হিন্দুধর্মে যখন উদারনৈতিক সংস্কার চলছিল, তখন ইসলাম ধর্মেও এক উদারনৈতিক মতবাদের প্রচার শুরু হয়। এই মতবাদ সুফিবাদ নামে পরিচিত। অনেকের মতে, এই মতবাদের প্রচারক সন্তগণ এক বিশেষ ধরনের পশমের পোশাক পরিধান করতেন। তা থেকেই এরা ‘সুফি’ নামে পরিচিত হন।

সুফি শব্দের অর্থ

‘সুফি’ হল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হল ‘বাণী’ এবং আরবি শব্দ ‘সুফ’-এর অর্থ হল ‘উল’ বা ‘পশম’। অর্থাৎ যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মোটা পশমের বস্ত্র পরিধান করেন, তাঁরা সুফি নামে পরিচিত। আর ‘সাফা’ শব্দের অর্থ হল ‘পবিত্র জীবনযাপন’।

সুফিবাদের উদ্ভব

সুফিবাদের উদ্ভব নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। যথা-

(i) অনেকের মতে, সুফিবাদের উৎপত্তি ঘটেছে হিন্দু বেদান্ত দর্শন, বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও অন্যান্য ধর্মীয় আদর্শের সমন্বয়ে।

(ii) ইউসুফ হোসেন-এর মতে, ‘সুফিবাদ হল ইসলামের রূপান্তর এবং ইসলামের বক্ষদেশ থেকেই সুফিবাদের জন্ম।’

(iii) অনেকের মতে, হজরত মহম্মদের ইসলাম ধর্মের প্রচারকালে একদল জ্ঞানী ও ভাববাদী মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের কাছে হজরত মহম্মদ ছিলেন পয়গম্বর ও কোরানই ছিল তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। হজরত মহম্মদ ছিলেন অতীন্দ্রিয়বাদী ও মরমী। সংযমী হওয়াকে হজরত ঈশ্বর লাভের অন্যতম শর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভোগ-বিলাসের প্রাচুর্য দেখা যায়। এতে শঙ্কিত হয়ে কিছু সংস্কারক ইসলামের গূঢ় তত্ত্ব প্রচারে আগ্রহী হন এবং সুফিবাদের প্রচার শুরু করেন।

(iv) অনেকের অনুমান, বৌদ্ধধর্মের প্রভাব থেকে সুফিবাদের উৎপত্তি হয়েছে। সুফিবাদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে বৌদ্ধ সংস্কৃতি লক্ষ করে অনেকেই মনে করেছেন বৌদ্ধধর্মের প্রভাবেই সুফিবাদের উদ্ভব ঘটেছে। এই যুক্তির সপক্ষে ড. সতীশচন্দ্র বলেছেন, ‘ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে মধ্য এশিয়াতে বৌদ্ধধর্মই জনপ্রিয় ছিল।’

Leave a Comment