![]() |
স্বাধীন ভারতের রূপকার আম্বেদকর রচনা |
ভূমিকা
ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা তথা স্বাধীন ভারতের রূপকার বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর ছিলেন একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, ঐতিহাসিক, বাগ্মী, দলিত ও অন্ত্যজদের জন্য আন্দোলনকারী, বিশিষ্ট লেখক, জ্যুরিস্ট, রাষ্ট্রবিপ্লবী ও বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী হিসেবে পরিচিত। এই মনীষীর জন্মের ১২৫ বছর পর তাই তাঁর চিন্তাধারা, আদর্শ ও কর্মপন্থার বিস্তারের প্রয়োজনে নানা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। তাঁর জাতীয়তাবাদী ভাবধারা ও দলিতদের জন্য আন্দোলন ভারতবাসীর কাছে প্রেরণাস্থল হয়ে থাকবে।
বাল্যজীবন
ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৮৯১-১৯৫৬) বর্তমান মধ্যপ্রদেশের ‘মহর’ পরিবারে (অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে গণ্য হত) জন্মগ্রহণ করেন ‘মোহ’ (Mhow)-তে, কেন্দ্রীয় সামরিক সেনানিবাসে। তিনি ছিলেন রামজী মালোজী শাকপাল এবং ভীমাবাঈ-এর ১৪তম তথা সর্বকনিষ্ঠ পুত্র। পিতা সন্তানকে শিক্ষার প্রতি এবং হিন্দু সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও দলিত বলে তাঁকে বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়। অল্প বয়সে মা মারা যাওয়ায় মাসির সান্নিধ্যে কষ্টের পরিবেশে তিনি লালিত পালিত হন।
শিক্ষাজীবন
কার্য ও লক্ষ্য
তিনি অন্ত্যজ ও সমাজের নীচু তলার মানুষের অধিকারের স্বীকৃতিটুকুই শুধু নয়, সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্য থেকেই যাতে অধিকারের জন্য লড়া যায়, সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। আম্বেদকর মনে করতেন, “যে স্বরাজে অবদমিত শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি সুনিশ্চিত নয়, তাঁদের কাছে তা স্বরাজ হবে না। তাঁদের কাছে তা হবে নয়া দাসত্ব।” তাই সামাজিক এবং জাতপাতের বহুস্তরীয় ব্যবস্থায় যাঁদের অবস্থান একেবারে নীচে, যাঁরা দরিদ্রতম তাঁদের গণতান্ত্রিক সাম্যের উপর আইনি ব্যবস্থাকে তিনি রক্ষাকবচ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সংবিধান আশ্রিত লড়াইয়ের যে পরম্পরা তিনি সৃষ্টি করেছিলেন, তা-ই বর্তমান ভারতে বহু গণ-আন্দোলনের সাফল্য অর্জনে সাহায্য করেছে। দরিদ্ররা পেয়েছেন প্রশ্ন তোলার অধিকারের রাজনৈতিক পরিসর। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে তথ্যের অধিকারের লক্ষ্যে যাত্রা, পরবর্তীকালে যা হয়ে উঠেছে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার আইন প্রণয়নের দাবি।
পুস্তক
সংবিধান
স্বাধীনতা প্রাপ্তির মুহূর্তে নবগঠিত কংগ্রেস শাসিত সরকার আইন মন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ২৯শে আগস্ট (১৯৪৭) তাঁকে সংবিধান খসড়া সমিতির সভাপতি করে, যা ভারতের নতুন মুক্ত সংবিধান রচনায় বিধানসভা কর্তৃক আরোপিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধানটি গৃহীত হয়।
জাত পাত
ধর্ম
নৃতত্ত্বের ছাত্র হিসেবে আম্বেদকর আবিষ্কার করেন মহরেরা আসলে প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ। তাঁর মতে বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাদেরকে গ্রামের বাইরে সমাজচ্যুতদের মতো থাকতে বাধ্য করা হয়, অবশেষে তারাই অস্পৃশ্যতে পরিণত হয়। এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কারা শুদ্র ছিল?’ ১৯৫০-এ তিনি শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঐতিহ্যবাহী প্রথায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে ‘ত্রিশরণ’ ও ‘পঞ্চশীল’ গ্রহণের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হন এবং তাঁর অনুগামী পাঁচ লক্ষ মানুষকে ধর্মান্তরিত করান এবং নেপালের কাঠমান্ডুতে ৪র্থ বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
উপসংহার
১৯৯০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ উপাধি ‘ভারতরত্ন’ দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়। প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী হিসেবে পালিত হচ্ছে। তিনি তাঁর অনুসারীদের বার্তা দিয়েছিলেন: ‘শিক্ষিত হও, আন্দোলন করো, সংগঠিত হও’। বর্তমান ভারতবর্ষেও তাঁর এই বার্তা সমান প্রাসঙ্গিক।