পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির কারণসমূহ
পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভূত অগ্রগতি ঘটেছিল। এই সময় প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির কারণসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন পণ্ডিতগণ নানান মতামত ব্যক্ত করেছেন। যথা-
(1) শিল্পপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি: বিশিষ্ট ঐতিহাসিক অ্যাস্টন (Aston) প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির জন্য শিল্পপণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। ইউরোপে সমকালীন পর্বে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন শিল্পপণ্যের ক্রেতা ছিল। এই বিশাল সংখ্যক মানুষদের শিল্পপণ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
(2) জনসংখ্যা বৃদ্ধি: ষোড়শ শতকে ইউরোপের প্রায় সব অঞ্চলেই জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত জনসংখ্যার মানুষদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বিভিন্ন শিল্পপণ্যের প্রয়োজন ছিল। ফলে ইউরোপে শিল্পপ্রযুক্তি ও কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছিল।
(3) পুঞ্জীভূত সম্পদের বিনিয়োগ: কোনও কোনও ঐতিহাসিকের মতে, পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপে একটি বিশেষ শ্রেণির হাতে যে অর্থসম্পদ পুঞ্জীভূত হয়, সেই অর্থই শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হলে শিল্পপ্রযুক্তির উন্নয়নের রাস্তা খুলে যায়। ক্রমে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগ মানবসভ্যতা এবং জীবনধারাকে দ্রুত ও নিরাপদে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
(4) বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ: পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে নবজাগরণের পরবর্তীকালে চিন্তাজগতে যে পরিবর্তন হয়, তার ফলে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশের ফলে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গতিসঞ্চার হয়। পাশাপাশি গ্যালিলিও, রজার বেকন, কেপলার-এর মতো বিজ্ঞানীগণ প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
(5) রাজকীয় সমর্থন ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতা: ইউরোপের অনেক রাজা এবং অভিজাত পরিবার জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। এ প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ এবং ইটালির মেদিচি পরিবারের নাম উল্লেখযোগ্য।
(6) ধর্মসংস্কারের অভিঘাত: ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন এবং ক্যাথলিক পুনর্জাগরণ তথা প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তা সামাজিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকেও করে প্রভাবিত। বিশেষত নতুন ধর্মীয় ও সামাজিক চিন্তার অভিঘাতে ইউরোপে শিক্ষার প্রসার ঘটে, যা প্রকারান্তরে প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকেই ত্বরান্বিত করে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, ইউরোপে প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে নানা কারণ দায়ী ছিল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) ইউরোপে পঞ্চদশ শতক থেকে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অগ্রগতির পশ্চাৎপটে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ, কৃষির চাহিদা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর