সমকালীন ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনসমূহ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান

সমকালীন ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনসমূহ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান | Somokalin Varote Nagorik Somajer Andolon somuha (5th Chapter) Question Answer Class 12 Semester IV

সমকালীন ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনসমূহ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর
সমকালীন ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনসমূহ (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর

1. সিভিল সোসাইটি কে কী কী নামে অভিহিত করা যায়? একে সমাজের তৃতীয় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কেন?

উঃ ‘সিভিল সোসাইটি’-কে বাংলায় বেশ কয়েকটি নামে অভিহিত করা যায়, যথা-নাগরিক সমাজ, পৌর সমাজ, সুশীল সমাজ।

‘নাগরিক সমাজ’-কে সমাজের তৃতীয় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কারণ, এটি সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা থেকে পৃথক একটি ক্ষেত্র। অর্থাৎ নাগরিক সমাজ সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কাজ করে বলে একে অনেকে সমাজের তৃতীয় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

2. সিভিল সোসাইটি বা পুর সমাজের ধারণাটি কে সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন? তিনি নাগরিক সমাজ বলতে কী বুঝিয়েছিলেন?

উঃ জার্মান দার্শনিক হেগেল প্রথম নাগরিক সমাজের ধারণাটিকে ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি আদর্শবাদী দর্শনের আলোকে রাষ্ট্রের আবির্ভাব আলোচনায় পৌর বা নাগরিক সমাজকে পরিবার ও রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী পর্যায়ের অবস্থারূপে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর মতে, নাগরিক সমাজ হল রাষ্ট্রের অংশ, যা নাগরিক সমাজ এবং সরকার উভয়কে একসঙ্গে নিয়ে গঠিত এবং নাগরিক সমাজে ব্যক্তি তার চাহিদা এবং স্বার্থপূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

3. গ্রামসি পৌর সমাজ বলতে কী বুঝিয়েছিলেন?

উঃ গ্রামসির মতে পৌর সমাজ: মার্কসীয় তাত্ত্বিক অ্যান্টোনিও গ্রামসি পৌর সমাজকে উন্নত দেশগুলিতে শ্রমিকশ্রেণির প্রতিরোধমূলক বৈপ্লবিক সংগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছিলেন। গ্রামসির মতে, রাষ্ট্র হল বলপ্রয়োগের ও সম্মতি এক জটিল সমাহার। তিনি মনে করেন, শাসকশ্রেণি সিভিল সোসাইটিতে মতাদর্শগত আধিপত্য বিস্তার করে সম্মতি অর্জনের দ্বারা নিজেদের শাসন ও শোষণ বজায় রাখতে চায়। গ্রামসি মনে করেন, শ্রমিকশ্রেণির উচিত সিভিল সোসাইটির স্তরে পালটা মতাদর্শগত আধিপত্য গড়ে তুলে সমাজতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া।

4. নাগরিক সমাজ বলতে কী বোঝো?

উঃ নাগরিক সমাজের ধারণা: সাধারণত নাগরিক সমাজ হল সমাজের কিছু মানুষের এমন এক সংগঠন যা সরকার, বাণিজ্যিক সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং তাদের দাবিদাওয়া আদায়ে ও অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকারে স্বাধীনভাবে কাজ করে। নাগরিক সমাজ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

মূলত সমাজে বসবাসকারী জনগণের এমন কিছু চাহিদা থাকে যেগুলি পূরণ করতে রাষ্ট্র অক্ষম বা অনিচ্ছুক, সেইসব চাহিদা পূরণে নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসে।

5. সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের ধারণাটি কীভাবে এসেছে?

উঃ প্রাচীন যুগে নাগরিক সমাজ। লাতিন শব্দ সিভিলিস সোসাইটাস (Civilis Societas) থেকে সিভিল সোসাইটি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। তবে প্রাচীন গ্রিস ও রোমের বিভিন্ন দার্শনিকদের হাত ধরে ধারণাটি গড়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রিসে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখেছিলেন, যেখানে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হত। আবার, রোমান আইনে ব্যক্তির অধিকার ও কর্তব্যের ধারণা নাগরিক সমাজের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।

তবে সেই সময় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমার্থক হিসেবে নাগরিক সমাজকে গণ্য করা হলেও বর্তমানে রাষ্ট্র বা সরকারের থেকে পৃথক অর্থে এটি ব্যবহৃত হয়।

6. নাগরিক সমাজের আধুনিক ধারণার উৎপত্তি কবে হয়েছে?

উঃ আধুনিক নাগরিক সমাজের উৎপত্তি: নাগরিক সমাজের ধারণা একটি পরিবর্তনশীল ধারণা। প্রাচীনকালে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো পৃথককরণ করা হত না। বরং নাগরিক সমাজকে রাষ্ট্রের অংশ বলা হত। পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলোকায়নের যুগে ও শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে আধুনিক অর্থে নাগরিক সমাজের ধারণা গড়ে ওঠে।

7. রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো।

উঃ রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের পার্থক্য:

(i) রাষ্ট্র হল একটি স্থায়ী ও বৃহত্তর সামাজিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নাগরিক সমাজ অস্থায়ী সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকে পৃথক একটি ক্ষেত্র।

(ii) রাষ্ট্রের সদস্যপদ গ্রহণ করা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু নাগরিক সমাজের বা পৌর আন্দোলনের সদস্যপদ গ্রহণ করা ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

৪. ব্রিটিশ ভারতে সামাজিক সংস্কার সম্পর্কিত কয়েকটি সংস্থার নাম লেখো।

উঃ ভারতে পৌর আন্দোলনের ইতিহাস নতুন নয়। স্বাধীনতার পূর্বে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছিল। বিশেষত আন্দোলনগুলি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার দূরীভূত করে সমাজকল্যাণে অগ্রসর হয়েছিল। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য প্রাচীনকালে ভারতে সামাজিক সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রামমোহন রায়-এর ব্রাহ্যসমাজ (১৮২৮ খ্রি.), থিওসফিক্যাল সোসাইটি (১৮৭৫ খ্রি.), রামকৃয় মিশন (১৮৯৭ খ্রি.), সেবা সমিতি (১৯১৪ খ্রি.) দয়ানন্দ সরস্বতী-র আর্যসমাজ (১৮৭৫ খ্রি.) ইত্যাদি।

9. ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলনের নাম উল্লেখ করো, যেগুলি পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয়েছিল।

উঃ ভারতে গড়ে ওঠা কয়েকটি আন্দোলন হল রাজা রামমোহন রায়-এর নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা রদ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর বিধবা বিবাহের প্রচলন, জ্যোতিরাও ফুলে-র নারীশিক্ষার প্রচেষ্টা প্রভৃতি। পরবর্তীকালে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করেন। এ ছাড়াও ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ আইন পাস করা হয়।

10. নাগরিক সমাজের প্রয়োজনীয়তা কী?

উঃ যে কোনো রাষ্ট্রের দুটি মূল অংশ থাকে-সরকার ও জনগণ বা সিভিল। সরকার ও নাগরিকের মধ্যেকার যোগসূত্র হল নাগরিক সমাজ। নাগরিক সমাজ রাষ্ট্র তথা সরকারের প্রশংসা, সমালোচনা করে ও সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে। একদিকে নাগরিক সমাজ নাগরিকের কাছে সরকারের বার্তা পৌঁছে দেয় আবার নাগরিকদের প্রয়োজনসমূহ সরকারের কাছে তুলে ধরে। এই কারণেই সুশীল সমাজ বা নাগরিক সমাজের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

11. ভারতের পৌর আন্দোলনে গান্ধিজির ভূমিকা আলোচনা করো।

উঃ ভারতের পৌর আন্দোলনে গান্ধিজির ভূমিকা: স্বাধীনতার পূর্বে ভারতে যেসকল পৌর আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার অধিকাংশই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এই সময় মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলন সংঘটিত হয় যেমন-অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.) এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২খ্রি.) ইত্যাদি। এই আন্দোলনগুলি নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছিল। একইসঙ্গে নারী, শ্রমিক এবং ছাত্ররাও স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

12. ভারতের পৌর আন্দোলনে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলনের ভূমিকা লেখো।

উঃ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে তোলে। বিভিন্ন দেশপ্রেমমূলক সংবাদপত্র যেমন-বাল গঙ্গাধর তিলকের কেশরী ও মারাঠা, কৃয়কুমার মিত্র-এর সঞ্জীবনী, এছাড়া অমৃতবাজার পত্রিকা, গান্ধিজির ইয়ং ইন্ডিয়া, অরবিন্দ ঘোষের বন্দেমাতরম পত্রিকা উল্লেখযোগ্য। আবার সাহিত্য যেমন-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ, বিবেকানন্দের বর্তমান ভারত ইত্যাদি নাগরিক সমাজের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

13. ভারতের কোথায় কবে তথ্যের অধিকার নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়?

উঃ ভারতের রাজস্থানে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম তথ্যের অধিকার বা Right to Information নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। এক্ষেত্রে মজদুর কিষাণ শক্তি সংগঠন (MKSS) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে ২০০৫ সালে পার্লামেন্ট ভারতে তথ্যের অধিকার আইন বা RTI Act প্রণয়ন করে। যা সরকারকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করে।

14. ভারতে করে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন গাড় ওঠে? এই আন্দোলনে কে নেতৃত্ব প্রদান করেছিল?

উঃ ২০১১ সালে ভারতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন গান্ধিবাদী সমাজকর্মী আন্না হাজারে। মন্ত্রী ও সরকারি কর্মচারী কর্তৃক যেসকল দুর্নীতি সংঘটিত হয় তার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য একজন স্বাধীন লোকপাল তৈরির দাবি নিয়ে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাঁর পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরিওয়ালও এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করা হয়।

15. গণতন্ত্র বিকাশে নাগরিক সমাজ কীভাবে কাজ করে?

উঃ (i) সমাজের বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পৌর আন্দোলন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে গণতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে।

(ii) নাগরিকদের নিজ অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত ও সচেতন করা এবং তাদের ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে নাগরিক সমাজ।

16. পশ্চাত্পদ বা অনগ্রসর শ্রেণির অধিকার রক্ষায় আম্বেদকরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি পৌর সংগঠনের নাম লেখো।

উঃ বিভিন্ন পৌর সংগঠনগুলি দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণির অধিকার রক্ষায় কাজ শুরু করে। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য স্বাধীনতার পূর্বেই ড. আম্বেদকরের নেতৃত্বে পশ্চাত্পদ জাতিদের উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষায় বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা (১৯২৪ খ্রি.), সারা ভারত তপশিলি উপজাতি ফেডারেশন (১৯৪২ খ্রি.) গড়ে উঠেছিল।

17. নাগরিক সমাজের যে-কোনো দুটি ভূমিকা উল্লেখ করো।
অথবা, নাগরিক সমাজের দুটি কার্যাবলি লেখো।

উঃ নাগরিক সমাজের বিভিন্ন কাজ বর্তমান। এর মধ্যে প্রধান দুটি কাজ হল-

① শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন: সমাজে নিরক্ষরতা দূর করতে বিনামূল্যে শিক্ষা, প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতা কর্মসূচি, ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার, পশ্চাত্পদ জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার প্রসারে কাজ করে থাকে নাগরিক সমাজ। যেমন-Pratham, Teach for India ইত্যাদি। আরও বলা যায়, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির, টিকাদান কর্মসূচি, মা ও শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার চালায় পৌর সমাজ।

② নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি: ‘Me Too’ (২০১৭ সাল)-এর মতো সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মহিলাদের উপর হওয়া যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সংবাদ মাধ্যম, পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নারীদের অধিকারের পক্ষে সচেতনতামূলক প্রচার চালায় পৌর সমাজ।

18. সমাজে নাগরিক আন্দোলানর দুটি গুরুত্ব কী?

উঃ নাগরিক আন্দোলনের বিবিধ গুরুত্ব আছে, তার মধ্যে দুটি হল-

① জনসচেতনতা গড়ে তোলা একদিকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন যেমন নাগরিকদের সচেতনতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে তেমনই নাগরিক সমাজের আন্দোলন জনসচেতনতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। বিভিন্ন ইস্যুতে নাগরিক সমাজের আন্দোলন জনগণের অধিকার সম্পর্কে নাগরিকদের সজাগ করে। এক্ষেত্রে পৌর সমাজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকে।

② সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা: নাগরিক আন্দোলন মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় গড়ে ওঠে। মূলত আন্দোলনগুলি সমাজের বিভিন্ন দুর্বল ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করে। সামাজিক বৈষম্য দূর করতে ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্দোলনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

19. নাগরিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দুটি সমালোচনা লোখা।

উঃ নাগরিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দুটি সমালোচনা হল-

① সুদক্ষ নেতৃত্বের অভাব: সামাজিক আন্দোলনসমূহ অনেকসময় চরমপন্থী ও হিংসাশ্রয়ী সক্রিয়তার জন্ম দিতে পারে। কারণ এই ধরনের আন্দোলনগুলিতে কোনো সুসংবদ্ধ ও সুদক্ষ নেতৃত্ব লক্ষ করা যায় না।

② রাজনৈতিক চাপ: পৌর আন্দোলনগুলি অনেকক্ষেত্রেই রাজনৈতিক চাপে স্থগিত হয়ে যায়। সরকার আন্দোলন দমনে বিভিন্ন সময়ে হিংসার ব্যবহার করে। আবার অনেকসময় সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক শক্তি আন্দোলনগুলিকে সহযোজিত করে ফেলে। ফলে আন্দোল আন্দোলনগুলি নিজের স্বতন্ত্রতা হারায়। এই

20. পৌর আন্দোলনগুলিকে কেন নয়া সামাজিক আন্দোলন বলা হয়?

উঃ ১৯৬০-এর দশক থেকে চিরাচরিত শ্রেণিভিত্তিক, বর্ণভিত্তিক বা মতাদর্শভিত্তিক সামাজিক সক্রিয়তার পরিবর্তে অনেক নতুন নতুন বিষয় যেমন- মানবাধিকার সংরক্ষণ, লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্রদ্র্য ও অপুষ্টি দূরীকরণ ইত্যাদি আলোচনার কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হয়। নাগরিক সমাজের স্তরে এমন সমস্ত ইস্যুগুলি নিয়ে ভাষ্য তৈরি হল যা আগে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। পূর্বতন বা চিরাচরিত সামাজিক আন্দোলনগুলির তুলনায় এগুলি লক্ষ্য ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে অন্য ধরনের ছিল। বস্তুগত ধারণা বা কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে এই সকল আন্দোলনগুলি সংগঠিত হয়েছিল। সেইদিক দিয়ে এগুলি বিশেষত্বের দাবি করতে পারে। তাই এগুলিকে নয়া সামাজিক আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়।

21. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কবে শুরু হয়েছিল এবং কেন?

উঃ ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

প্রধানত বৃহৎ নদী বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল। বাঁধ নির্মাণের ফলে অববাহিকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের বাস্তুচ্যুতি, পরিবেশের অবক্ষয়ের মতো বিষয়গুলি তুলে ধরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল।

22. মূলত কোন দুটি বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন গড়ে উঠেছিল?
অথবা, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারি কয়েকজন সদস্যের নাম লেখো।

উঃ মূলত সর্দার সরোবর বাঁধ এবং নর্মদা সাগর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বরা হলেন মেধা পাটেকর এবং বাবা আমতে। এ ছাড়াও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লালবিহারী মুকাতি, মোহন ভাই, যোগিনী বাই, ঊর্মিলা দেবী, কমলা দেবী প্রমুখ।

23. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল? অথবা, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের মূল কারণ কী?

উঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের উদ্দেশ্য: নর্মদা নদীর উপরে বৃহদাকার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প যাতে রূপায়িত না হয় তার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। সেইসঙ্গে বাঁধ নির্মাণের ফলে অববাহিকা এলাকার আশপাশের বসবাসকারী গ্রামীণ প্রান্তিক পরিবারের মানুষদের বাস্তুচ্যুতি, পরিবেশের অবক্ষয়ের মতো বিষয়গুলিকে তুলে ধরা এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে বিশাল বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাও ছিল আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।

24. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের দুটি জোগান কী ছিল? বাবা আমতে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের জন্য কত দিন অনশন করেছিলেন?

উঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের দুটি স্লোগান ছিল ‘উন্নয়ন চাই ধ্বংস নয়’ (বিকাশ চাহিয়ে বিনাশ নেহি’) এবং ‘আমরা নড়ব না, বাঁধ নির্মাণ হবে না’ (কোয়ি নেহি হাটেগা, বাঁধ নেহি বানেগা)।

বাবা আমতে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের জন্য ২২দিন অনশন করেছিলেন।

25. নর্মদা আন্দোলনের দুটি প্রভাব বা ফলাফল আলোচনা করো।

উঃ নর্মদা আন্দোলনের দুটি ফলাফল হল-

① আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ: নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে আদিবাসী, কৃষক, পরিবেশকর্মী, মানবাধিকার কর্মী যোগদান করার ফলে তা শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সীমিত থাকেনি, সামাজিক আন্দোলন হিসেবেও গড়ে উঠেছিল। যার ফলে এই আন্দোলন সারা দেশের এমনকি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে।

② নর্মদা রক্ষার্থে বিভিন্ন মামলাসমূহ: নর্মদা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ শুধু অনশন, বিক্ষোভ বা অবস্থান নয়, আইনি পথেও প্রকল্পের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এপ্রসঙ্গে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন বনাম ভারত সরকার ও অন্যান্যদের মামলা, ২০০০ সালে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলা, ২০১১ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার বনাম নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন মামলার কথা উল্লেখ করা যায়। তবে সর্বোচ্চ আদালত তার সর্বশেষ রায়ে বাঁধের উচ্চতার সীমা বেধে দিয়ে বাঁধ নির্মাণ সমাপ্ত করতে বলেছে। অবশ্য আন্দোলনকারীগণ এই প্রস্তাবেও সন্তুষ্ট নয়। ফলে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন এখনও চলছে। করো।

26. নমর্দা আন্দোলনের দুটি গুরুত্ব আলোচনা

উঃ নর্মদা আন্দোলনের গুরুত্ব হল-
সুস্থায়ী উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ: নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন বৃহদায়তন উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিদ্যমান ভাবনাচিন্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল এবং সুস্থায়ী ও সামাজিক সম্প্রদায়ভিত্তিক বিকল্প উন্নয়ন পথা অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল।

অহিংস আন্দোলনের পথ অবলম্বন: সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন যেভাবে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত প্রান্তিক মানুষজনের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার স্বীকৃতিস্বরূপ এই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব মেধা পাটেকর এবং বাবা আমতে-কে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ‘রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’

27. কে নর্মদা উপতাকা উন্নয়ন প্রকল্পটি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে কে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন?

উঃ ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নর্মদা উপত্যকা উন্নয়ন প্রকল্পটি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে জওহরলাল নেহরু এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

28. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল এবং কেন?

উঃ নর্মদা নদীর উপর সর্দার সরোবর এবং নর্মদা সাগর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মেধা পাটেকর নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

29. কোন অঞ্চলে চিপকো আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল? চিপকো আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উঃ ১৯৭০-এর দশকের শুরু থেকে উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল অঞ্চলে চিপকো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

চিপকো আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।

30. ‘চিপকো কথাটির অর্থ কী?

উ: চিপকো কথার অর্থ: ‘চিপকো’ কথাটি এসেছে হিন্দি শব্দ চিপকানা থেকে যার অর্থ হল জড়িয়ে ধরা বা আলিঙ্গন করা। এই আন্দোলনের নামকরণ মূলত কিছু গ্রামবাসীদের গাছকে জড়িয়ে ধরার এক প্রাণপন প্রয়াস থেকে হয়েছে। অর্থাৎ এই আন্দোলনের চরম প্রকাশ ঘটেছিল ঠিকাদারের কুঠারাঘাত থেকে গাছকে জড়িয়ে ধরে রক্ষা করার উদ্যোগের মাধ্যমে।

31. ভারতের প্রথম পরিবেশ আন্দোলন কোনটি?

উঃ ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থানের মাড়ওয়ার অঞ্চলে বসবাসকারী বিয়োই সম্প্রদায়ের চিপকানা আন্দোলন ছিল ভারতের প্রথম পরিবেশ আন্দোলন। বিয়োই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পবিত্র খেজারী গাছ রক্ষার উদ্দেশ্যে গাছকে জড়িয়ে ধরে আন্দোলন করেছিলেন।

32. অমৃতাদেবী বিষ্ণোই কে ছিলেন? চিপকো আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বদের নাম লেখো।

উঃ অমৃতাদেবী বিষ্ণোই ছিলেন বিষ্ণোইসম্প্রদায়ের একজন নারী। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে বিয়োইদের চিপকানা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। গ্রামবাসীদের পবিত্র খেজারী গাছ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ জানালে তাকে হত্যা করা হয়।

চিপকো আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বরা হলেন-সুন্দরলাল বহুগুণা, সরলা বেন, চণ্ডীপ্রসাদ ভাট, গৌরা দেবী, বাছনি দেবী, ধুম সিং নেগী প্রমুখ।

33. চিপকো আন্দোলনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা দুটি সংগঠনের নাম লেখো।

উঃ সংগঠন: পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছিল। যেমন-১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের গান্ধিবাদী নেত্রী সরলা বেন-এর উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল ‘উত্তরাখণ্ড সর্বোদয় মণ্ডল’ এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে গোপেশ্বরে চন্ডী প্রসাদ ভাটের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ‘দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মন্ডল (DGSM)’

34. কোন কোন অঞ্চলে চিপকো আন্দোলন বিস্তার লাভ করেছিল?

উঃ চিপকো আন্দোলন হিমালয়ের গাড়োয়াল প্রদেশের মন্ডল গ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংঘটিত হলেও তার প্রভাব কেবল এই অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই আন্দোলন তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন-গোপেশ্বর, চামোলি ইত্যাদি এলাকা।

35. চিপকো আন্দোলনে গৌরা দেবীর ভূমিকা কী ছিল?

উঃ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাখন্ডের রেণী গ্রামে সরকারি বনবিভাগ বনাঞ্চলের একটি বড় অংশ ঠিকাদারদের কাছে ইজারা দেয়। এই ঠিকাদাররা পুরুষদের অনুপস্থিতিতে গাছ কাটার পরিকল্পনা করে। এই সময় অন্যান্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে গৌরা দেবী বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করার জন্য গাছকে জড়িয়ে ধরে ঠিকাদারদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন। এই আন্দোলনে গৌরা দেবী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

36. কত খ্রিস্টাব্দে নরেন্দ্রনগর অঞ্চলে চিপকো আন্দোলন শুরু হয়? এই অঞ্চলে চিপকো আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কে?

উঃ ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ঋষিকেশের অদূরবর্তী নরেন্দ্রনগর অঞ্চলে চিপকো আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।

নরেন্দ্রনগর অঞ্চলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাছনি দেবী। তাঁর নেতৃত্বে অন্যান্য মহিলারাও আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

37. চিপকো আন্দোলনে সুন্দরলাল বহুগুণার ভূমিকা লেখো।

উঃ সুন্দরলাল বহুগুণার ভূমিকা: ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তেহরির বাদিয়াগড় পট্টিতে গাছ কাটার জন্য ঠিকাদার নিয়োজিত হলে সুন্দরলাল বহুগুণা ও তাঁর স্ত্রী বিমলা বহুগুণা দ্রুত গ্রামবাসীদের গাছ কাটার কুফলগুলি বুঝিয়ে সচেতন করেন এবং প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আন্দোলন ফলপ্রসূ করতে সুন্দরলাল বহুগুণা অনশন শুরু করেছিলেন, যদিও তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তবুও আন্দোলন সফল হয়।

38. চিপকো আন্দোলনের দুটি পদ্ধতি লেখো।

উঃ চিপকো আন্দোলনের পদ্ধতি: চিপকো আন্দোলনের দুটি পদ্ধতি হল-

① চিপকো আন্দোলন ছিল একটি অহিংস আন্দোলন যা গান্ধিবাদী অহিংস আন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

(ii) এই আন্দোলনে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির উপায় হিসেবে সংগঠিত করা হয়েছিল অনশন।

39. চিপকো আন্দোলনে উত্তরাখণ্ড সর্বোদয় মন্ডল এর ভূমিকা লেখো।

উঃ গান্ধিবাদী নেত্রী সরলা বেন-এর উদ্যোগে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাখন্ড সর্বোদয় মন্ডল গড়ে উঠেছিল। এই সংগঠনটি চিপকো আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে সংগঠনটি সমাজ সংস্কারমূলক। কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অরণ্যের অধিকারের দাবিতে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল।

40. চিপকো আন্দোলনে ‘দাশোলি গ্রাম স্বরাজা মন্ডল’ এর ভূমিকা লেখো।

উঃ দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মণ্ডল-এর ভূমিকা ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে গোপেশ্বরে চন্ডীপ্রসাদ ভাটের নেতৃত্বে গঠিত সমাজ সংস্কারমূলক একটি সংগঠন দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মন্ডল (DGSM), এলাকার মানুষদের জীবিকার জন্য বনদফতরের কাছ থেকে কিছু গাছ কাটার অনুমতি চাইলে বনদফতর তা নাকচ করে দেয়। কিন্তু মুনাফার স্বার্থে এক ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থাকে বনের গাছ কাটার ইজারা দিলে দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মন্ডল-এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। চন্ডীপ্রসাদ ভাট-এর নেতৃত্বে আন্দোলন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মন্ডল এবং গ্রামবাসীদের মিলিত সহায়তার এই অঞ্চলে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করা সম্ভব হয়।

41. কোন্ আন্দোলন থেকে চিপকো আন্দোলনের চিপকানা পদ্ধতিটি গৃহীত হয়েছে?

উঃ চিপকো আন্দোলনের ‘চিপকানা’ অর্থাৎ গাছকে জড়িয়ে ধরে ঠিকাদারদের কুঠারের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের ঐতিহ্য অষ্টাদশ শতকে রাজস্থানের বিয়োই সম্প্রদায়ের পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন থেকে গৃহীত হয়েছে।

42. কর্ণাটকে আপ্পিকো আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারা? কর্ণাটকের কোথায় আগ্নিকো আন্দোলন হয়েছিল?

উঃ আপ্পিকো আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পান্ডুরঙ্গ হেগড়ে প্রমুখ ব্যক্তিগণ।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ণাটকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কালসে বন সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আল্পিকো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। পরিবেশবাদী পান্ডুরঙ্গ হেগড়ের নেতৃত্বে স্থানীয় অধিবাসীরা সরকারকে বৃক্ষচ্ছেদন থেকে বিরত রাখার জন্য গাছকে জড়িয়ে ধরেন। এইভাবেই চিপকো আন্দোলনের পদ্ধতি অনুসরণ করেই আপ্পিকো আন্দোলন পরিচালিত হয়।

43. চিপকো আন্দোলনের দুটি গুরুত্ব লেখো।

উঃ চিপকো আন্দোলনের গুরুত্ব: চিপকো আন্দোলনের দুটি গুরুত্ব হল-

  • এই আন্দোলন বনভূমি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বনভূমি সংরক্ষণ আইন দ্বারা হিমালয় অঞ্চলে ১৫ বছরের জন্য গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
  • এই আন্দোলনটি বনজ সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

44. চিপকো আন্দোলনের দুটি প্রভাব আলোচনা করো।

উঃ চিপকো আন্দোলনের প্রভাব: চিপকো আন্দোলনের দুটি প্রভাব হল-

  • চিপকো আন্দোলনের ফলে পরিবেশের সঙ্গে জীবনযাপন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের এক নতুন মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের ফলে হিমালয়ের বনাঞ্চল সংরক্ষণে নতুন নীতি ঘোষিত হয়।
  • এই আন্দোলনের ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের বনভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

45. চিপকো আন্দোলন সফল করার জন্য দুটি সরকারি পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা উল্লেখ করো।

উঃ চিপকো আন্দোলন সফল করার জন্য দুটি সরকারি পদক্ষেপ হল- গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হেমবতী নন্দন বহুগুণা একটি কমিটি গঠন করেছিলেন এবং জনগণের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি হিমালয় অঞ্চলে ১৫ বছরের জন্য বৃক্ষচ্ছেদনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আন্দোলনকে সফল করেছিলেন।

46. চিপকো আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্ব হিসেবে কাকে অভিহিত করা যায়? চিপকো আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?

উঃ চিপকো আন্দোলনের জনক বা প্রধান নেতৃত্ব ছিলেন সুন্দরলাল বহুগুণা। তিনি তেহরী গাড়োয়াল অঞ্চলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

চিপকো আন্দোলনের স্লোগান ছিল ‘Ecology is permanent economy’ এটি সুন্দরলাল বহুগুণা কর্তৃক রচিত হয়েছিল।

47. চিপকো আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ চিপকো আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য: চিপকো আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

চিপকো আন্দোলন গান্ধিবাদী অহিংস আদর্শকে অনুসরণ করেছিল। বৃক্ষকে রক্ষা করার জন্য সেগুলিকে জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল।

চিপকো আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এটি ছিল পরিবেশ রক্ষার একটি সফল নারী আন্দোলন।

48. চিপকো আন্দোলনের কারণ কী ছিল?

উঃ চিপকো আন্দোলনের কারণ: ১৯৭০-এর দশকের শুরু থেকে উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল অঞ্চলে এই আন্দোলন শুরু হয়। মুলত বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্য ধ্বংসের প্রতিবাদে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment