![]() |
অনুমানের বিরুদ্ধে চার্বাকদের যুক্তিগুলি কী |
অনুমানের বিরুদ্ধে চার্বাকদের যুক্তি
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে অনুমানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু চার্বাকগণ অনুমানকে কখনোই প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেন না।
অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়ার প্রক্রিয়া
চার্বাক মতে, ব্যাপ্তিজ্ঞান হল মূলত অন্ধকারে এক ঝাঁপ দেওয়ার মতো এক অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। আর এর ওপর অনুমান নির্ভরশীল বলে, অনুমানকেও অন্ধকারে ঝাঁপের সঙ্গেই তুলনা করা হয়েছে। অনুমান তাই নেহাতই একটি আন্দাজের বিষয়রূপে গণ্য এবং সন্দেহের দোলায় দোদুল্যমান। আর সে কারণেই অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
সংশয় নিরসনে ব্যর্থতা
চার্বাকগণ দাবি করেন যে, ব্যাপ্তি সম্বন্ধ হল দুটি বিষয়ের মধ্যে নিয়ত স্বাভাবিক সহচার সম্বন্ধ। কিন্তু সার্বিক সহচার সম্বন্ধের অর্থই হল তা বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ, তা সর্বকালীনরূপে গণ্য হবে। কিন্তু বর্তমানকালে তা প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হলেও অতীত ও ভবিষ্যৎকালে তাকে প্রত্যক্ষ করা আদৌ সম্ভব হয় না। সুতরাং সেক্ষেত্রে সংশয় থেকেই যায়। ফলে, নিয়ত সহচার সম্বন্ধের ওপর নির্ভরশীল অনুমানও সম্ভব নয়।
অনবস্থা দোষের অবস্থা
চার্বাকগণ দাবি করেন যে, ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষযোগ্য নয় বলে, তা আবার অনুমাননির্ভরও হতে পারে না। কারণ, ব্যাপ্তিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যদি অনুমানের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়, তা হলে সেই অনুমানটির ব্যাপ্তিজ্ঞানের জন্য আরও একটি অনুমানের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। আর এভাবে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে গেলে অনবস্থা দোষের উদ্ভব হয়। ফলত, ব্যাপ্তি সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল অনুমান আদৌ সম্ভব নয়।
আপ্ত ব্যক্তির বাক্যও সংশয়পূর্ণ
চার্বাকগণ আরও বলেন যে, ব্যাপ্তি সম্বন্ধের জ্ঞান কোনো আপ্ত বা বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকেও পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আপ্ত বা বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিটি যে প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বাসযোগ্য, তাও আবার এক প্রকার অনুমান সাপেক্ষ। এই আপ্তজ্ঞানকে বলা হয় ‘শব্দ-প্রমাণ’। সুতরাং ‘শব্দ-প্রমাণ’-ও ব্যাপ্তি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
সুতরাং ব্যাপ্তি সম্বন্ধ একেবারেই সম্ভব নয়। আর সেই কারণেই ব্যাপ্তি সম্বন্ধের ওপর নির্ভরশীল অনুমানও প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
পরোক্ষ জ্ঞানকে অস্বীকার
সবশেষে উল্লেখ করা যায় যে, চার্বাকগণ হলেন প্রত্যক্ষবাদী। তাঁরা অপ্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জ্ঞানকে কখনোই স্বীকার করেন না। অনুমানও পরোক্ষ জ্ঞানরূপে গণ্য হওয়ায় তা কখনোই যথার্থ প্রমাণরূপে গ্রাহ্য হতে পারে না।
সমালোচনা
চার্বাকগণ যে অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেন না তা কিন্তু সন্তোষজনক নয়। কারণ, জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে অনুমানের যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তা অস্বীকার করা যায় না। এমনকি সুশিক্ষিত চার্বাকগণও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছেন। তা ছাড়াও উল্লেখ করা যায় যে, অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে স্বীকার না করলে, জ্ঞানের সীমানা অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে পড়ে। সুতরাং অনুমান সম্পর্কে চার্বাকদের দাবি যথার্থ নয়।