অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পাস হলে দেশময় আন্দোলনের সূচনা হয়।
তো চলুন আজকের মূল বিষয় অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা পড়ে নেওয়া যাক।
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
![]() |
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
|
অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পাস হলে দেশময় আন্দোলনের সূচনা হয়। সমাজের অন্যান্য স্তরের সঙ্গে ছাত্রসমাজও ব্যাপক হারে এই আন্দোলনে যোগদান করে। বাংলার ছাত্র সমাজ ছিল সর্বাগ্রগণ্য।
- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সর্বপ্রথম বঙ্গবাসী ও বিদ্যাসাগর কলেজের সহস্রাধিক ছাত্র ক্লাস বয়কট করে। তাদের দেখাদেখি একে একে রিপন, সিটি, স্কটিশচার্চ এবং সাউথ সুবার্বন কলেজের ছাত্ররা এই আন্দোলনে সামিল হয়। বিভিন্ন দেশাত্মবোধক সঙ্গীত কণ্ঠে নিয়ে তারা কলকাতার রাজপথে মিছিল বের করে। ১৪ থেকে ১৮ই জানুয়ারির মধ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার অন্তত পাঁচটি ছাত্রসভায় ভাষণ দিয়ে ছাত্রদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বয়কটের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন- “গোলামখানা ছেড়ে দাও- Education may wait but Swaraj can not”। ১৯২১-এর ২০ জানুয়ারি ‘স্বরাজ’-এর দাবিতে কলকাতার সব স্কুল কলেজে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়। প্রায় তিন হাজার ছাত্র ধর্মঘট করে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে জমায়েত হয়। তারা শপথ গ্রহণ করে যে, স্বরাজ অর্জন না করে তারা আর কলেজে ফিরবে না। বাংলার অবিসংবাদী নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এই সভায় উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে, “বাংলার ছাত্রসমাজ, আমি তোমাদের নমস্কার করি।”
- ১৯২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ‘জাতীয় কলেজ ‘প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয় কাশী বিদ্যাপীঠ, বিহার বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ প্রভৃতি শিক্ষায়তন। বিহারে প্রায় ৬০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরপ্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ১৩৭টি বিদ্যালয়। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আচার্য নরেন্দ্র দেব, জাকির হোসেন, রাজেন্দ্র প্রসাদ, লালা লাজপৎ রায়, সুভাষচন্দ্র বসু-র মতো মানুষেরা।
- সেদিন হাজার হাজার ছাত্র স্কুল-কলেজ ত্যাগ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দোলনের অবসানে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়, আবার অনেকে স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হয়। এই সময় থেকে স্থায়ীভাবে ‘স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’ গঠিত হতে শুরু করে।
আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রিঃ)
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর ভারতের ছাত্রসমাজ কিন্তু হতাশ হয় নি। এই পর্বে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে এবং ছাত্রীরাও সক্রিয়ভাবে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৯২৬-এ ভগৎ সিং-এর নেতৃত্বে পাঞ্জাবে গঠিত হয় ‘নওজোয়ান ভারতসভা’। ১৯২৮ সালে কংগ্রেসের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘হিন্দুস্থানী সেবা দল’। ১৯২৮-এ কলকাতায় গড়ে ওঠে ‘অল বেঙ্গল স্টুডেন্টস্ অ্যাসোশিয়েশন’ (A.B.S.A.)। এই সমিতির সম্পাদক ছিলেন কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ছাত্ররা দলে দলে এই সব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলন বা বিপ্লবী যতীন দাশের মৃত্যুতে আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল গৌরবজ্জ্বল।
গান্ধিজির ডান্ডি অভিযান (১২ মার্চ, ১৯৩০) এবং ডান্ডি উপকূলে লবণ আইন ভঙ্গ (৬ই এপ্রিল, ১৯৩০), ভগৎ সিং -সুখদেব ও রাজগুরুর ফাঁসি (১৯৩১ খ্রিঃ), দীনেশ গুপ্ত- রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি, আন্দামান বন্দীদের মুক্তি, হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ প্রভৃতি বিষয়ে হরতাল, বিক্ষোভ বা আন্দোলনেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন
১৯৪২-এর ৯ই আগস্ট ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন শুরু হলে সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে। কলকাতার প্রতিটি স্কুল কলেজে ধর্মঘট শুরু হয়। ছাত্রদের সভা ও শোভাযাত্রায় কলকাতা- সারা বাংলা উত্তাল হয়ে ওঠে। কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ চলে। এই আন্দোলনে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগ্রামী ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। বিহারে জাতীয় পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। তাতে সাতজন ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গ্রামে গ্রামে প্রচারকার্য চালায় এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজ করতে থাকে। গুজরাটে ছাত্র-ছাত্রীরা ‘বানর সেনা’ নামে সংগঠন গড়ে তোলে।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।