অ্যারিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে কী জান

অ্যারিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে কী জান

অথবা, অ্যারিস্টট্লের রাষ্ট্রধারণা সংক্ষেপে আলোচনা করো

অ্যারিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে কী জান
অ্যারিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে কী জান

ভূমিকা

রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অ্যারিস্টট্ল। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কিত সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ‘দ্য পলিটিক্স’। এই গ্রন্থে তিনি বাস্তবসম্মতভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি পর্যালোচনা করেছেন। ওয়ার্নার জেগারের মতে, অ্যারিস্টট্ল তাঁর পলিটিক্স গ্রন্থে একদিকে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা এবং অন্যদিকে রাজনৈতিক দর্শনের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেছেন।

(1) রাষ্ট্রের জৈব মতবাদ: অ্যারিস্টট্ল রাষ্ট্র ও জীবদেহের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর মতে, জীবদেহের সঙ্গে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, ঠিক তেমনই রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও অনুরূপ। তাঁর মতে, “রাষ্ট্রই হল মানুষের স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান”। জীবদেহের মৃত্যু হলে যেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোনো মূল্য থাকে না, তেমনি রাষ্ট্র ধ্বংস বা অবলুপ্ত হলে ব্যক্তি মানুষেরও কোনো অস্তিত্ব থাকে না। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের বাইরে ব্যক্তি মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই।

(2) স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান: অ্যারিস্টট্ল তাঁর পলিটিক্স গ্রন্থে রাষ্ট্রকে অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেছে। মানুষ তার জীবন ও নিরাপত্তার তাগিদেই একসময় রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুভব করে। তিনি বলেছেন, “মানুষ হল একটি রাজনৈতিক জীব” (Man is a political animal)।

(3) রাষ্ট্রের উৎপত্তি: অ্যারিস্টট্লের মতে, তিনটি স্তরের ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেছে। তাঁর মতে, মানুষ তার নিজের প্রয়োজনের তাগিদে প্রথমে গড়ে তোলে পরিবার, কতকগুলি পরিবার মিলে গড়ে ওঠে গ্রাম এবং কতকগুলি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠে একটি রাষ্ট্র। তাই তিনি বলেছেন-“রাষ্ট্র হল কতকগুলি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি”। অ্যারিস্টট্ল বলেছেন, রাষ্ট্রের মধ্যেই মানুষের জীবন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে ওঠে।

(4) আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা: পলিটিক্স-গ্রন্থে অ্যারিস্টট্ল আদর্শ রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কেও তাঁর ধারণা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা থাকবে জ্ঞানী ও আদর্শবান শাসকের হাতে। তিনি আদর্শ রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা বৃহৎ বা ক্ষুদ্র কোনোটিরই পক্ষপাতী ছিলেন না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যাবাইন বলেছেন, “অ্যারিস্টট্ল আদর্শ রাষ্ট্রের থেকেও রাষ্ট্রীয় আদর্শগুলির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন”। তিনি সরকারকে মূলত রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও মধ্যবিত্ততন্ত্র এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।

মূল্যায়ন

সবশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অ্যারিস্টট্ল -এর অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হলেও তার রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে মৌলিকতার ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে রাষ্ট্রকে ব্যাখ্যা করেন। এই কারণে তাঁকে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment