![]() |
আত্মা সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা কী |
আত্মা সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা
আত্মা সম্পর্কিত চার্বাকদের মতবাদ বহুলভাবে সমালোচিত। অন্যান্য ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়গুলি চার্বাকদের দেহাত্মবাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাই বলা যায়, এই মতবাদের কোনো সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।
[1] চৈতন্যের অপ্রত্যক্ষ স্বরূপ
চার্বাকগণ দাবি করেন যে, চৈতন্য হল দেহেরই ধর্ম, আত্মার ধর্ম নয়। চার্বাকদের এরূপ দাবিটি যদি সত্য হয়, তাহলে এই দাবি করা সংগত যে, অপরাপর জড় ধর্মের মতো চৈতন্যেরও প্রত্যক্ষ সম্ভব। কিন্তু চৈতন্যের বাহ্য প্রত্যক্ষ যেহেতু সম্ভব নয়, সে কারণে চৈতন্যকে দেহের গুণ বলে দাবি করা যায় না। চৈতন্য তাই অবশ্যই দেহাতিরিক্ত আত্মার ধর্মরূপে গণ্য।
[2] বিভিন্ন অঙ্গে চেতনার অনুপস্থিতি
আবার চৈতন্য যদি দেহের ধর্ম হত তাহলে দেহের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের চেতনা থাকত। তাহলে দেহ থেকে কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলেও দেহের সেই অংশের মধ্যেও চেতনার উপস্থিতি থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তা আদৌ হয় না। সুতরাং চৈতন্য যে দেহেরই গুণ, চার্বাকদের এরূপ দাবিটি সংগত নয়।
[3] স্মৃতির ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি
চার্বাক দেহাত্মবাদ স্বীকার করে নিলে, স্মৃতির ব্যাখ্যা অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্মৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য তাই অবশ্যই চিরন্তন আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিতেই হয়। ফলে, আত্মা কখনোই দেহাত্মকরূপে গণ্য হতে পারে না।
[4] দেহাতিরিক্ত সত্তার অনিবার্যতা
চার্বাক মতে, দেহ হল চৈতন্যের আশ্রয় এবং এই দেহের মধ্যেই চৈতন্য প্রকাশিত। কিন্তু তাই বলে দেহ নিজে চৈতন্যের প্রকাশকরূপে গণ্য হতে পারে না। দেহে চৈতন্যের প্রকাশের জন্য অন্য কোনো দেহাতিরিক্ত সত্তার প্রয়োজন হয়। ফলে, চৈতন্যরূপ আত্মা কখনোই দেহাত্মক হতে পারে না।
[5] ‘মোক্ষ’র ধারণার সঙ্গে অসংগতি
মোক্ষ বা মুক্তি বলে যদি কিছু স্বীকৃত হয় তবে তার জন্য দেহাতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিতেই হয়। কারণ, মোক্ষ এক জন্মেও হতে পারে, আবার তা পরজন্মেও হতে পারে। সে কারণেই দাবি করা সংগত যে, আত্মা কখনোই দেহাত্মকরূপে গণ্য হতে পারে না।