![]() |
একাদশ শ্রেণি দর্শন ভারতীয় নীতিবিদ্যা পুরুষার্থ ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর (২য় সেমেস্টার) |
পুরুষার্থ কী?
▶ শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে-পুরুষ (সচেতন আত্মা) + অর্থ (কাম্যবস্তু) = পুরুষার্থ। অর্থাৎ, সচেতন আত্মা যা কামনা করে, তাকেই বলা হয় পুরুষার্থ। পুরুষার্থের বিষয়টিকে কখনোই জন্মসূত্রে লাভ করা যায় না, একে সাধনার দ্বারা অর্জন করতে হয়। এ হল মানুষের শ্রেষ্ঠ কাম্যবস্তু-যা পাওয়ার জন্য মানুষ কামনা করে।
কাম্যবস্তু কী?
▶ কাম্যবস্তু হল এমনই বস্তু যা মানুষ পাওয়ার জন্য কামনা করে। এই সমস্ত আকাঙ্ক্ষিত কাম্যবস্তুগুলি অবশ্যই নৈতিক আদর্শে আলোকিত। কাম্যবস্তুগুলি মানুষের করায়ত্ত না হলেও সেগুলিকে সাধনা ও কর্মচোদনার দ্বারা লাভ করা যায়। শ্রেষ্ঠ কাম্যবস্তুকেই পুরুষার্থরূপে গণ্য করা হয়।
কাম্যবস্তু কীভাবে লাভ করা যায়?
▶ কাম্যবস্তুগুলিকে শুধু সাধনা ও কর্মচোদনার দ্বারা লাভ করা যায়। নৈতিকতার বিষয়টি যখন মানুষের মনের গভীরে প্রোথিত হয়, তখন মানুষ নৈতিকতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয় এবং সমস্ত কিছুকেই নৈতিকতার আদর্শে প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করে। এরূপ অবস্থাতেই সাধনার দ্বারা কাম্যবস্তু লাভ করা যায়।
পুরুষার্থকে কেন সাধ্য বলা হয়?
▶ ভারতীয় নীতিতত্ত্বে যা সাধনালব্ধ বিষয় তাকেই বলা হয় সাধ্য। পুরুষার্থ ভারতীয় নীতিতত্ত্বে সাধনালব্ধ বিষয়রূপে গণ্য। সে কারণেই পুরুষার্থকে সাধ্যরূপে গণ্য করা হয়।
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে মূল্য কত প্রকার ও কী কী?
▶ ভারতীয় নীতিতত্ত্বে দুই প্রকার মূল্যের উল্লেখ করা হয়েছে। এই দু-প্রকারের একটি হল-চরম বা পরমমূল্য (Absolute Value) এবং অপরটি হল আপেক্ষিক মূল্য (Relative Value)। যার নিজস্ব ও চিরন্তন মূল্য আছে তাকেই বলা হয় চরম বা পরমমূল্য, যেমন সত্য, শিব ও সুন্দরের মূল্য। অপরদিকে যার নিজস্ব ও চিরন্তন কোনো মূল্য নেই, কিন্তু তাৎক্ষণিক মূল্য আছে-তাকে বলা হয় আপেক্ষিক মূল্য। যেমন-অর্থ। চরম মূল্য স্থান-কাল- ভেদে পরিবর্তিত না হলেও আপেক্ষিক মূল্যগুলি অবশ্যই স্থান-কাল-ভেদে পরিবর্তিত হয়।
পুরুষার্থ কয়টি ও কী কী?
▶ ভারতীয় নীতিতত্ত্বে পুরুষার্থ হল চারটি-ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ। এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে মোক্ষকেই শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ বলা হয়। কারণ, এই মোক্ষের কামনাকেই মানুষের সর্বোচ্চ কামনারূপে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মোক্ষ তথা মুক্তিলাভ হলে, মানুষের আর অন্য কোনো কিছুরই পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে না।
ত্রিবর্গ কাকে বলে?
▶ ভারতীয় চিন্তাধারার প্রথম পর্বে ধর্ম, অর্থ এবং কাম-এই তিনটি পুরুষার্থকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। পুরুষার্থের এই তিনটি রূপ বা বর্গকে বলা হয় ত্রিবর্গ। ত্রিবর্গের ধারণায় মোক্ষের ধারণাটি পুরোপুরিভাবেই অনুপস্থিত।
চতুর্বর্গ কী?
▶ ভারতীয় চিন্তাধারার প্রথম পর্বে ধর্ম, অর্থ এবং কাম-এই ত্রিবর্গের ধারণার সঙ্গে পরবর্তীকালে মোক্ষ নামক চতুর্থ পুরুষার্থটি যুক্ত হয়েছে। এই চারটি পুরুষার্থকে একসঙ্গে বলা হয় চতুর্বর্গ। ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই চতুর্বর্গের ধারণাটিকে মেনে নিয়েছে এবং এদের মধ্যে মোক্ষকেই শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
চার্বাক মতে পুরুষার্থ কী?
▶ চার্বাক মতে কাম-ই হল মুখ্য পুরুষার্থ। কারণ, কাম মানুষের ইন্দ্রিয়সুখ উৎপাদন করে। তাঁরা তাই বলেন-সুখমেব পুরুষার্থ। অর্থাৎ, সুখভোগই হল একমাত্র পুরুষার্থ ও নৈতিক আদর্শ। আর কামসুখ উৎপাদন করতে সমর্থ বলেই তা পুরুষার্থরূপে গণ্য। চার্বাকগণ অর্থকে গৌণ পুরুষার্থের মর্যাদা দিয়েছেন, কারণ তা কামসুখ চরিতার্থের সহায়করূপে গণ্য।
ধর্ম কী?
▶ ধর্ম শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে ধূ-ধাতু থেকে এবং এর সঙ্গে মন প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে। ধূ-ধাতুর অর্থ হল ধারণ করা। সুতরাং শব্দতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যা মনকে ধারণ করে তাই হল ধর্ম।
ধর্মের রূপ ক-টি ও কী কী?
▶ ধর্মের রূপ হল দুটি-বাহ্যরূপ এবং আন্তররূপ। ধর্মের বাহ্যরূপের মাধ্যমে তার আচারনিষ্ঠাকে প্রকাশ করা হয় এবং তার আন্তররূপের মাধ্যমে ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থটিকে সূচিত করা হয়। অর্থাৎ, বলা যায় যে, সামাজিক জীবনের বিভিন্ন প্রকার আচার-অনুষ্ঠানই হল ধর্মের বাহারূপ। অপরদিকে, ধর্মীয় অনুভূতি এবং আত্মোপলব্ধি প্রভৃতি বিষয়ই হল ধর্মের আন্তররূপ।
পুরাণে উল্লিখিত নৈতিক নিয়মগুলি কী?
▶ পুরাণে উল্লিখিত নৈতিক নিয়ম হল দশটি। এই দশটি নৈতিক নিয়ম হল যথাক্রমে (১) অহিংসা, (২) ক্ষমা, (৩) শম-দম্, (৪) দয়া, (৫) শৌচ, (৬) দান, (৭) সত্য, (৮) তপস্, (৯) অস্তেয় এবং (১০) জ্ঞান।
সাধারণ ধর্ম কাকে বলে?
▶ সাধারণ তথা সার্বিকভাবে পালনীয় যে ধর্ম-তাকেই বলা হয় সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্ম হল মানুষের সামাজিক অবস্থানসাপেক্ষ এবং এরূপ সামাজিক অবস্থানের আলোকেই তা বিচার্য। এই সাধারণ ধর্ম সার্বিক কোনো নৈতিক আদর্শের আলোকেই আলোকিত।
বর্ণাশ্রম ধর্ম কী?
▶ সামাজিক মানুষের বর্ণ এবং আশ্রমের ওপর ভিত্তি করেই যে ধর্ম গড়ে উঠেছে-তাকেই বলা হয় বর্ণাশ্রম ধর্ম। বর্ণ শব্দটি এক্ষেত্রে জাতিরূপেই গণ্য এবং আশ্রম শব্দটি এখানে জীবনের এক-একটি পর্যায়রূপেই গ্রাহ্য।
মনুসংহিতায় কোনগুলিকে সাধারণ ধর্ম বলা হয়েছে?
▶ মনুসংহিতায় দশটি সাধারণ ধর্মের উল্লেখ করা হয়েছে। এই দশটি সাধারণ ধর্ম হল-(১) ধৃতি, (২) ক্ষমা, (৩) দম্, (৪) অস্তেয়, (৫) শৌচ, (৬) ধী, (৭) নিগ্রহ, (৮) বিদ্যা, (৯) সত্য এবং (১০) অক্রোধ। এই দশটি সাধারণ ধর্ম পুরাণে উল্লিখিত দশটি নৈতিক নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
বর্ণধর্ম কয়টি ও কী কী?
▶ প্রাচীন ভারতে চারটি বর্ণধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই চারটি বর্ণধর্ম হল যথাক্রমে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, ক্ষত্রিয় ধর্ম, বৈশ্য ধর্ম এবং শূদ্র ধর্ম। এই চারটি ধর্মকে একসঙ্গে বলা হয় চতুর্বর্গ।
ব্রাহ্মণ্য ধর্ম কী?
▶ ব্রাহ্মণদের পালনীয় ধর্মকেই বলা হয় ব্রাহ্মণ্য ধর্ম। যাদের মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রাবল্য বেশি তাদেরকেই বলা হয় ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণদের পালনীয় ধর্ম হল- অধ্যাপনা করা, দানগ্রহণ করা, আস্তিক্য, সদাচার বজায় রাখা এবং যজ্ঞানুষ্ঠানের পরিচালনা করে যথাযথভাবে যজ্ঞ সম্পাদন করা।
ক্ষাত্রধর্ম কী?
► ক্ষত্রিয়দের পালনীয় ধর্মকেই বলা হয় ক্ষাত্রধর্ম। যাদের মধ্যে রজোগুণের প্রাবল্য বেশি, তাদেরকেই বলা হয় ক্ষত্রিয়। ক্ষত্রিয়দের পালনীয় ধর্মগুলি হল রাজধর্ম রক্ষা করা, প্রজাপালন করা, অসাধু ও দুষ্কৃতিদের দমন করা, যুদ্ধ করা, এবং যুদ্ধে পরান্মুখ না হওয়া ইত্যাদি।
বৈশ্য ধর্ম কী?
▶ বৈশ্যদের পালনীয় ধর্মকে বলা হয় বৈশ্য ধর্ম। তমোগুণের তুলনায় রজোগুণের প্রভাব বেশি যাদের মধ্যে তাদেরকে বলা হয় বৈশ্য। এদের পালনীয় ধর্ম হল-কৃষিকর্ম, পশুপালন, ব্যাবসাবাণিজ্য এবং অপরাপর বিষয়কর্মে ব্যাপৃত থাকা।
শূদ্রধর্ম কী?
▶ শুদ্রদের আচরণীয় ধর্মকেই বলা হয় শূদ্রধর্ম। যারা তমোগুণ প্রধান সম্পন্ন তাদেরকেই বলা হয় শূদ্র। এদের পালনীয় ধর্ম হল-অপরাপর সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সেবা ও পরিচর্যা করা, তাদের সুখ-সুবিধার দিকে লক্ষ রাখা এবং তাদের আনন্দবর্ধন করে তৃপ্তিদান করা প্রভৃতি। এককথায় বলা যায় যে, অপরাপর মানুষের সুখ-সুবিধার দিকে লক্ষ রাখাই হল শূদ্রদের ধর্ম।
স্বধর্ম কী?
▶ নিজ নিজ বর্ণ অনুযায়ী পালনীয় ধর্মকেই বলা হয় স্বধর্ম। যেমন-ব্রাহ্মণ যাঁরা তাঁরা যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনা করবেন, ক্ষত্রিয় যাঁরা তাঁরা যুদ্ধ এবং প্রজাপালন করবেন, বৈশ্য যাঁরা তাঁরা কৃষিকর্ম ও ব্যাবসাবাণিজ্য করবেন এবং যাঁরা শূদ্র তাঁরা অপরাপর মানুষজনদের তথা অতিথিদের সেবা-শুশ্রুষা করবেন। ভারতীয় চিন্তাধারায় এই স্বধর্ম পালনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বধর্ম রক্ষার জন্য শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ কী?
▶ স্বধর্ম রক্ষার জন্য অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ হল- শ্রেয়ান স্বধর্ম বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ। স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরোধর্মো ভয়াবহ। অর্থাৎ, যার যা ধর্ম তার সেই ধর্মাচরণ করাই উচিত। অপরের ধর্ম কখনোই আচরণ করা উচিত নয়। স্বধর্মে মৃত্যু হলেও, পরধর্মের আচরণ অবশ্যই ভয়াবহ।
আশ্রম ধর্ম কী?
▶ জীবনের এক-একটি অধ্যায় তথা আশ্রমের পালনীয় ধর্মকেই বলা হয় আশ্রম ধর্ম। মানুষের জীবনে মোট চারটি অধ্যায় পরিলক্ষিত হয়। এই চারটি অধ্যায় হল যথাক্রমে-ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। এই চতুরাশ্রমের জন্য নির্দিষ্ট পালিত ধর্মকেই বলা হয় আশ্রম ধর্ম।
ব্রহ্মচর্য কী?
▶ চতুরাশ্রমের প্রথম অধ্যায়টিকেই বলা হয় ব্রহ্মচর্য। যাঁরা ব্রহ্মচর্য পালন করেন তাঁদের বলা হয় ব্রহ্মচারী। ব্রহ্মচারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করে যাতে তারা নৈতিক ও চারিত্রিক দিক থেকে বলীয়ান হতে পারে। এরূপ অধ্যায়টিকে বলা হয় আধ্যাত্মিক উত্তরণের প্রথম অধ্যায়।
গার্হস্থ্য কী?
▶ গার্হস্থ্য হল চতুরাশ্রমের দ্বিতীয় অধ্যায়। এই অধ্যায়ে মানুষ ব্রহ্মচর্য পালনের পর সংসারজীবনে প্রবেশ করে। এই অধ্যায়ে মানুষ তার সমস্তরকম সাংসারিক দায়দায়িত্ব পালন করে এবং স্ত্রীসম্ভোগের মাধ্যমে বংশধারা বজায় রাখে।
বানপ্রস্থ কাকে বলে?
▶ বানপ্রস্থ হল সংসারজীবনের পরবর্তী অধ্যায়। এ হল চতুরাশ্রমের তৃতীয় অধ্যায়। গার্হস্থ্য জীবনের সমাপনান্তে মানুষ বানপ্রস্থে গমন করে। বানপ্রস্থ হল সংসারজীবন থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন। বনবাসী হওয়া, গাছের ছাল-বল্কলাদি পরিধান করা, ফলমূল ভক্ষণ করা এবং অবশ্যই আত্মসংযমী হওয়া-প্রভৃতি হল বানপ্রস্থে পালনীয় ধর্মসমূহ।
সন্ন্যাস কাকে বলে?
▶ চতুরাশ্রমের শেষ আশ্রম হল সন্ন্যাস। সন্ন্যাস হল মানুষের আধ্যাত্মিক ও পারমার্থিক সত্তায় উত্তরিত শেষ অধ্যায়। এই অধ্যায়েই মানুষের জীবনের আগের অধ্যায়গুলি পূর্ণতা লাভ করে। এই শেষ অধ্যায়েই মানুষ চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে মোক্ষাভিমুখী করে গড়ে তোলে।
অর্থ কী?
▶ চতুর্বিধ পুরুষার্থের অন্যতম পুরুষার্থ হল অর্থ। অর্থ হল ধর্মের মৌল ভিত্তি এবং সে কারণেই বলা হয়েছে-ধর্মস্য মূলম্ অর্থঃ। অবশ্য পুরুষার্থ রূপ অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে শুধু সৎ উপায়ে অর্জিত এবং সৎভাবে ব্যয়িত অর্থকে।
কাম কী?
▶ কাম শব্দের সাধারণ অর্থ হল যৌন সুখসম্ভোগের ইচ্ছা। কিন্তু ভারতীয় নীতিতত্ত্বে রূপ অর্থে কামকে বোঝানো হয়নি। বোঝানো হয়েছে একটি বিশেষ অর্থে এবং এই বিশেষ অর্থটি হল-বুদ্ধিদীপ্ত সংযত কাম। এরূপ কাম- ই পুরুষার্থের মর্যাদায় ভূষিত।
মোক্ষ কী?
▶ চতুর্বিধ পুরুষার্থের শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ হল মোক্ষ। মোক্ষ হল অবিদ্যা, জীবনযন্ত্রণা, ভববন্ধন থেকে আত্মার চিরমুক্তি। এ হল চরম ও নিত্য পুরুষার্থ যা সমস্ত মানুষেরই কাম্য। এ হল এক চিরপ্রশান্তির অবস্থা-যা লাভ করলে মানুষ আর অন্য কোনো কিছুই পেতে চায় না।
মোক্ষ কয়প্রকার ও কী কী?
▶ মোক্ষ হল দু-প্রকার-জীবন্মুক্তি এবং বিদেহীমুক্তি। ইহজীবনে পাওয়া মুক্তিকেই বলা হয় জীবন্মুক্তি, আর দেহের অবসানের পর পাওয়া মোক্ষ বা মুক্তিকে বলা হয় বিদেহী মুক্তি। জীবন্মুক্তিকে সকলে স্বীকার করে না নিলেও, বিদেহী মুক্তিকে সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন।
মোক্ষ বা মুক্তির উপায় কী?
▶ মোক্ষলাভের উপায় কিন্তু কখনোই একটি নয়, তা হল একাধিক। এই উপায়গুলির অন্যতম হল তিনটি এবং সেগুলি হল-জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি। যাঁরা মনে করেন যে, একমাত্র তত্ত্বজ্ঞানের মাধ্যমেই মোক্ষ বা মুক্তিলাভ করা যায়, তাঁদের বলা হয় জ্ঞানমার্গী এবং তাদের অনুসৃত উপায়কে বলা হয় জ্ঞানমার্গ। – যাঁরা মনে করেন যে, মোক্ষলাভ করা যায় কর্মের মাধ্যমে তাঁদের বলা হয় কর্মমার্গী এবং তাঁদের অনুসৃত পথ হল কর্মমার্গ। আর যাঁরা বলেন ভক্তির দ্বারাই মোক্ষলাভ করা যায় তাঁদের বলা হয় ভক্তিমার্গী এবং তাঁদের অনুসৃত পথ হল ভক্তিমার্গ।