কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি আলোচনা করো

কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি আলোচনা করো

কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি আলোচনা করো
কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি আলোচনা করো

কনফুসিয়াসকে বলা যায় চিনের প্রথম নীতিবাদী। চিনা শাসক শ্রেণির কাছে এই কালজয়ী দার্শনিক ছিলেন এক অসামান্য শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক। তাঁর মতবাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি নিম্নরূপ-

কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক প্রভাব 

কনফুসিয়াসবাদের ইতিবাচক প্রভাবগুলি হল-

(1) পাশ্চাত্যে প্রভাব: প্রখ্যাত চিনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের মতাদর্শ ও বাণীগুলি তাঁর শিষ্যরা সংকলন করে রাখেন। এগুলি পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হলে, তা সেখানকার মনীষীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। যেমন-

  • কনফুসিয়াসের আদর্শে প্রভাবিত হয়েছেন বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক গটফ্রিড উইলহেম লিবনিজ (Gottfried Wilhelm Leibniz) I লিবনিজের দর্শনের সারাংশ এবং কয়েকটি উপাদান কনফুসীয়বাদ থেকে গৃহীত হয়।
  • প্রখ্যাত ফরাসি লেখক, দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ ভলতেয়ার (Voltaire)-ও কনফুসীয়বাদ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি কনফুসিয়াসের যুক্তিবাদের ধারণা লাভ করেন এবং একে খ্রিস্ট ধর্মের নীতির বিকল্প হিসেবে মনে করেন।

(2) প্রাচ্যে প্রভাব: প্রাচ্যেও কনফুসীয়বাদের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। যথা-

  • সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে চিনে বসবাসকারী তুই মুসলিমদের মধ্যে কনফুসীয় ও ইসলামি আদর্শের সমন্বয়ে হান কিতাব নামে এক সাহিত্য সৃষ্টি হয়।
  • প্রখ্যাত পণ্ডিত লিউ ঝি (Liu Zhi) তাঁর লেখায় ইসলামের সঙ্গে কনফুসীয় ও তাওবাদের সমন্বয়ের দাবি করেছিলেন।

কনফুসীয়বাদের নেতিবাচক প্রভাব

কনফুসীয় মতাদর্শের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও বর্তমান যথা-

(1) সমাজকাঠামো: কনফুসিয়াস মতবাদে এমন একপ্রকার সমাজকাঠামোকে সমর্থন করা হয়, যেখানে উচ্চ-নিম্ন স্তরবিন্যাস বর্তমান। অর্থাৎ, সমাজে কিছু মানুষ অন্যদের থেকে উচ্চতর স্থানে অবস্থান করে। এই ধারণা বৈষম্যকে ইন্ধন দিয়ে থাকে।

(2) ব্যক্তিস্বাধীনতা: কনফুসীয়বাদে পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রটি হয়েছে সীমাবদ্ধ। বিখ্যাত চিনা লেখক ও কূটনীতিবিদ হু সিহ (Hu Shih) যথার্থই কনফুসিয়াসবাদকে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন।

(3) নারীর মর্যাদা: কনফুসীয়বাদে নারীদের মর্যাদা পুরুষের নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তীকালের কনফুসীয়পন্থীরা নারীদের জন্য নানান আচরণবিধি তৈরি করেছিলেন, যেগুলি আদতে নারীর অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করেছে।

(4) রাজার স্বৈরাচারিতা: কনফুসীয়বাদ ঐতিহ্যগতভাবে রাজার শাসনকে সমর্থন করায় রাজতান্ত্রিক স্বৈরাচার এবং জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের পথ আরও উন্মুক্ত হয়ে গেছে।

মূল্যায়ন

অবশ্য সীমাবদ্ধতা থাকলেও বলা যায় যে, প্রথাগত অর্থে কনফুসীয়পন্থা কোনও ধর্ম নয়। এই পন্থা আসলে একটি দর্শন। The Morals of Confucius: A Chinese Philosopher নামক ইংরেজি গ্রন্থে তাঁর দর্শন প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে- এটি (কনফুসীয়বাদ) অসীম মহিমান্বিত, কিন্তু একইসঙ্গে ব্যাবহারিক ও বিচক্ষণতাসম্পন্ন, যে বিচক্ষণতা মানবিক যুক্তিবোধ থেকে উৎসারিত হয়েছে।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment