কামনার উপাদানগুলি উল্লেখ করো

কামনার উপাদানগুলি উল্লেখ করো
কামনার উপাদানগুলি উল্লেখ করো।

কামনার উপাদানসমূহ

নীতিবিজ্ঞানীদের মতে, কামনা হল একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। কামনার এই জটিল প্রক্রিয়াটিকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি মূল উপাদন লক্ষ করা যায়। কামনার এই তিনটি উপাদান হল-[1] জ্ঞানগত উপাদান (Cognitive Element), [2] অনুভূতি বা আবেগগত উপাদান (Affective Element) এবং [3] কর্মপ্রবণতাগত উপাদান (Conative Element) ।

[1] জ্ঞানগত উপাদান (Cognitive Element)

কামনার জ্ঞানগত উপাদানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে, আমাদের প্রত্যেকটি কামনার মধ্যে একপ্রকার অভাববোধের সচেতনতা যুক্ত থাকে। এরূপ অভাববোধ কোনো ব্যক্তির নিজেরও হতে পারে, আবার তা অন্য কারোরও হতে পারে। যাই হোক- না-কেন, অভাববোধের সঙ্গে আবার যুক্ত থাকে অভাববোধ দূরীকরণের ধারণা এবং তার পরিতৃপ্তিবোধও। কামনার জ্ঞানগত উপাদানকে তাই এভাবেই উল্লেখ করা যায় যে, (i) অভাবের চেতনা, (ii) অভাবপূরণে কাম্যবস্তুর ধারণা, (iii) কাম্যবস্তু লাভের উপায় এবং (iv) পরিতৃপ্তির প্রত্যাশা। পরিতৃপ্তির প্রত্যাশাটি যতই বেড়ে যায়, ততই কামনার তীব্রতাও বেড়ে যায়। এই সমস্ত উপাদানগুলি একসঙ্গে মিলিত হয়ে কামনাকে সূচিত করে, যা আবার সুখদুঃখের ধারণাকে নির্দেশ করে।

[2] অনুভূতি বা আবেগগত উপাদান (Affective Element)

প্রত্যেকটি কামনা বা আকাঙ্ক্ষা যার সঙ্গে যুক্ত থাকে একপ্রকার অনুভূতি বা আবেগ। এই অনুভূতি বা আবেগকেই বলা হয় কামনার অনুভূতি বা আবেগমূলক উপাদান। কামনার অনুভূতি যেহেতু অভাববোধ থেকে নিঃসৃত, সেহেতু এই উপাদানটি সাধারণভাবে অপ্রীতিকররূপেই গণ্য। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, এই অপ্রীতিকর অনুভূতি থেকেই ভবিষ্যতে প্রীতিপূর্ণ অনুভূতি লাভ করা যায় বলেই, মানুষ এ থেকে কর্মপ্রেরণা লাভ করে। কারণ কাম্যবস্তুটি লাভ করা গেলে, তার অভাবটি যেমন দূর হয়, তেমনই আবার তার প্রাপ্তিতে তৃপ্তিলাভও হয়। এমনই এক সুখানুভূতির সৃষ্টি হয় কর্মকর্তার মনে। সুতরাং বলা যায় যে, কামনার ক্ষেত্রে যে একপ্রকার আবেগমূলক উপাদান বর্তমান, তা অস্বীকার – করা যায় না।

[3] কর্মপ্রবণতাগত উপাদান (Conative Element)

কামনা বা আকাঙ্ক্ষার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, তা প্রথমে একপ্রকার অভাববোধের বিষয়কে সূচিত করে। এরপরই তা কিন্তু আবার কাম্যবস্তুলাভের বোধ এবং উপায়কেও নির্দেশ করে। এখানেই কিন্তু তার পরিসমাপ্তি ঘটে না, কারণ তা আমাদেরকে কর্মেও প্রবৃত্ত করে। কারণ কর্ম না করলে কখনোই কাম্যবস্তুটিকে পাওয়া সম্ভব নয়। কামনা তাই কাম্যবস্তু লাভের জন্য মানুষকে কর্মপ্রবৃত্তির পথে চালিত করে এবং কর্মের মাধ্যমেই তাকে লাভ করার চেষ্টা করে। এই কর্মের পথটি যে সবসময়ই সহজভাবে উপস্থিত হবে, এমনটি নাও হতে পারে। কারণ, সেক্ষেত্রে নানারকম প্রতিকূলতার মধ্যে ব্যক্তিকে পড়তে হয়। এই সমস্ত প্রতিকূলতাগুলি পদে পদে আমাদের কর্মপ্রবৃত্তিকে বাধা দেয়। অর্থাৎ বলা যায় যে, আমরা খুব সহজেই আমাদের কাম্যবস্তুগুলিকে কখনোই লাভ করতে পারি না। বহু প্রতিকূলতার বাধা পেরিয়েই আমরা আমাদের কাম্যবস্তুটিকে লাভ করতে সমর্থ্য হই। সুতরাং, উল্লেখ করা যায় যে, কর্মের প্রকৃতি যাইহোক-না-কেন, আমাদের কামনার কর্মপ্রবণতাগত উপাদানই হল কাম্যবস্তু লাভের সহায়ক।

Leave a Comment