ক্রুসেডের সংগঠনের পশ্চাতে ধর্মীয় কারণ কী ছিল
অথবা, ক্রুসেডের পশ্চাতে ধর্মীয় উদ্দেশ্য লেখো

ভূমিকা
‘ক্রুসেড’ বলতে বোঝায় ধর্মযুদ্ধ বা ধর্মের কারণে যুদ্ধ। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের দীর্ঘস্থায়ী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ বিশেষ খ্যাত হয়ে আছে। খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ, ক্যাথোলিক চার্চ ও যাজকদের উদ্যোগে ইউরোপের খ্রিস্টান জগৎ এই ধর্মযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এই অভিযানের পশ্চাৎপটে নানা ধর্মীয় ভাবনা সক্রিয় ছিল।
(1) জেরুজালেম পুনর্দখলের চেষ্টা: প্যালেস্টাইনের অন্তর্ভুক্ত জেরুজালেম খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্রস্থানরূপে গণ্য হত। প্রতিবছর হাজার হাজার খ্রিস্টান জেরুজালেম পরিদর্শন করে পুণ্য অর্জন করতেন। অন্যদিকে এই জেরুজালেমে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদ তাঁর মিরাজ যাত্রা করেছিলেন। তাই মুসলমানদের কাছেও এই স্থান ছিল পবিত্রভূমি। হজরত ওমরের আমলে জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে চলে যায়। জেরুজালেম বিধর্মীদের হস্তগত হলে খ্রিস্টানদের ধর্মাচারে নানা বাধা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা খ্রিস্টানদের শঙ্কিত করে।
(2) সেলজুক তুর্কিদের আচরণ: আরব মুসলমানরা জেরুজালেম দখল করলেও খ্রিস্টানদের ধর্মযাত্রায় বাধা দিত না। কিন্তু একাদশ শতকে সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেম অধিকার করলে শক্তিশালী হলে জটিলতা শুরু হয়। সেলজুকরা ছিল সংকীর্ণমনা ও হিংস্র প্রকৃতির। তারা জেরুজালেমে আগত খ্রিস্টান ধর্মযাত্রীদের নানাভাবে বিব্রত করতে থাকে। তীর্থযাত্রীদের আটকে রাখা, অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা, তীর্থযাত্রীদের জিনিসপত্র লুঠ করা ইত্যাদি নানাভাবে খ্রিস্টানদের ওপর অত্যাচার করা হত। এর বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের মধ্যে এক তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। খ্রিস্টান জনগণকে শান্ত করার জন্য পোপ ও ক্যাথোলিক চার্চ ধর্মযুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।
(3) গ্রিক চার্চের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: রোমান ক্যাথোলিক চার্চ এবং গ্রিক চার্চের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ ছিল। তাই রোমান পোপ গ্রিক চার্চকে বশীভূত করে সমগ্র খ্রিস্টান জগতের ওপর রোমান ক্যাথোলিক চার্চের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এই গোপন ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে রোমান পোপ খ্রিস্টানদের উত্তেজিত করতে প্রয়াসী হন। খ্রিস্টানদের সংঘবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পোপ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ শুরু করতে উদ্যোগী হন।
(4) ধর্মযুদ্ধের সূচনা: পোপ দ্বিতীয় আরবান ছিলেন ক্ষমতালোভী ও কর্তৃত্ববাদে বিশ্বাসী। একাদশ শতকে রোমান সম্রাটের সঙ্গে পোপের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। “পোপ বড়ো নাকি সম্রাট বড়ো”-এই প্রশ্নের সমাধান ঘটাতে পোপ দ্বিতীয় আরবান ধর্মযুদ্ধের আশ্রয় নেন। ধর্মযুদ্ধের আবেগ দিয়ে তিনি খ্রিস্টান জনতাকে পোপের মঞ্চে সমবেত করতে উদ্যোগী হন। ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট শহরে এক ধর্মসভা আহ্বান করে পোপ সমবেত যাজক ও রাজন্যদের ইসলামবিরোধী ধর্মযুদ্ধে (ক্রুসেড) নামার আহ্বান জানান। ধর্মীয় আবেগ ও অন্যান্য নানা কারণে উচ্চ যাজক থেকে শুরু করে সম্রাট ও রাজন্যবর্গ সহ সাধারণ মানুষ পোপের অভিযানে শামিল হন। এইভাবে শুরু হয় (১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ) রক্তক্ষয়ী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর