![]() |
গীতাকে অনুসরণ করে স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণগুলি ব্যক্ত করো |
গীতাকে অনুসরণ করে স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণ
গীতায় ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে:
অর্থাৎ, দুঃখে যার চিত্ত উদ্বিগ্ন নয়, সুখেতে যার কোনো স্পৃহা নেই, যিনি অনুরাগ, ভয় ও ক্রোধ শূন্য হতে পেরেছেন-এমন ব্যক্তিকেই বলা হয় ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ।
স্থিতচিত্তে সমত্বজ্ঞানে স্থিতপ্রজ্ঞ
স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি যখন সমাধি অবস্থা থেকে ফিরে আসেন, তখন তাঁকেই বলা হয় ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি। সমাধিস্থ স্থিতপ্রজ্ঞের ন্যায় ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিও চিত্তের ভূমিতে অবস্থান করেন। সাধারণ মানুষ যেসমস্ত কামনার ভূমির সঙ্গে পরিচিত, সেই সমস্ত কামনার ভূমিতে কিন্তু ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি অবস্থান করেন না। সাধারণ মানুষ জাগ্রত এবং স্বপ্নাবস্থায় কামনার ভূমিতে অবস্থান করে। কিন্তু সুষুপ্তিতে প্রাজ্ঞ জীব কখনোই কামনার ভূমিতে থাকে না। সাময়িকভাবে সে চিত্তের ভূমিতে অবস্থান করে। কিন্তু আবার স্বপ্ন ও জাগ্রতকালে কামনার ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সমাধিস্থ ও ব্যুত্থিত-এই উভয় অবস্থাতেই স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি সর্বদা চিত্তভূমিতেই অবস্থান করে। চিত্তে স্থিত হলেই সমত্বজ্ঞান লাভ হয়।
তাপ-অনুতাপহীনে স্থিতপ্রজ্ঞ
ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি চিত্তের ভূমিতে অবস্থান করেন বলেই ব্যুত্থানের পর কাম্য বিষয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়সংযোগ হলেও তিনি সেই বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকেন। এর ফলে ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞের কোনো তাপ-অনুতাপ থাকে না। কোনোপ্রকার দুঃখেই তার মন উদ্বিগ্ন হয় না। এরূপ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি অনুরাগ, ভয় ও ক্রোধশূন্যরূপে গণ্য হন। এরূপ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি শুভ বস্তুলাভে তুষ্ট হন না, আবার অশুভ বা অনিষ্টমূলক বস্তুতে দ্বেষ করেন না। এরূপ ব্যক্তির কাছে তাই কোনোপ্রকার দ্বন্দ্বের প্রকাশ নেই।
ইন্দ্রিয়সংযমে স্থিতপ্রজ্ঞ
ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির ব্যবহার বিশ্লেষণ করে ভগবান শ্রীকৃয় বলেছেন- সমাধিস্থ যোগী যখন প্রারদ্ধ কর্মের ফলভোগের জন্য ওই অবস্থা থেকে ব্যুত্থিত হন, তখন তিনি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে সমাধিস্থ হওয়ার জন্যই উপবেশন করেন। কচ্ছপ যেমন পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেয়, তেমনই জ্ঞানী ব্যুত্থিত যোগীও ইন্দ্রিয়সমূহকে সকল প্রকার বিষয়াসক্তি থেকে গুটিয়ে নেন। সমাধিস্থ অবস্থায় অবশ্য মনের কোনো বৃত্তিই থাকে না। অবশ্যই উভয় অবস্থাতেই স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে ইন্দ্রিয়ের সংযম ও তাঁর প্রত্যাহার স্বভাবসিদ্ধ। এরূপ স্বাভাবিক প্রত্যাহারই স্থিতপ্রজ্ঞের যথার্থ লক্ষণ।
ভগবদাসক্তি ও ব্রাহ্মীস্থিতিতে স্থিতপ্রজ্ঞ
গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির কোনো বিষয়ের প্রতি আসক্তি থাকে না। তার চিত্তে যে আসক্তি পরিলক্ষিত হয়, তা হল ভগবদাসক্তি। সংযমকেই স্থিতপ্রজ্ঞের মূল লক্ষণরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। যোগীর ইন্দ্রিয়গুলি যদি সংযত থাকে, অর্থাৎ সেগুলি যদি পরিপূর্ণভাবে নিজের বশে থাকে, তবে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি বিষয়ের মধ্যে বিচরণ করেও আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। এর ফলে তাঁর চিত্ত প্রসন্ন হয় এবং সমস্ত প্রকার আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক দুঃখের অবসান ঘটে। এর ফলে তাঁর বুদ্ধি স্থিরতা লাভ করে। সেকারণেই বলা হয় যে, নিষ্কাম যোগীকে সমস্ত প্রকার ইন্দ্রিয়কে সর্বোতভাবে সংযত করতে হয়। এঁর ফলে তাঁর প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরূপ স্থিতধী ব্যক্তির কখনোই বিষয় ভোগ হয় না। কারণ, তাঁর চিত্ত বিষয়ে সমাহিত নয়, তাঁর চিত্ত শুধুমাত্র ঈশ্বরে সমাহিত। বিষয়ের প্রতি তাই তাঁর কোনো মমত্ববোধ থাকে না, আর কর্তৃত্বের কোনো অভিমানও থাকে না। এরূপ অবস্থায় নিষ্কাম যোগী তথা স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি এক পরমস্থিতি লাভ করেন। এরূপ অবস্থাকেই বলা হয় ব্রাহ্মীস্থিতি।