![]() |
গীতায় স্থিতপ্রজ্ঞার ধারণাটিকে উল্লেখ করো। স্থিতপ্রজ্ঞ কয়প্রকার ও কী কী |
গীতায় স্থিতপ্রজ্ঞার ধারণা
গীতায় নিষ্কাম কর্মের আলোচনার প্রসঙ্গেই স্থিতপ্রজ্ঞার বিষয়টি উঠে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, স্থিতপ্রজ্ঞা কী? এরূপ প্রশ্নের উত্তরে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিষ্কাম যোগী যখন বুদ্ধির ভূমিতে আবূঢ় হন, তখন তাকেই বলা হয় স্থিতপ্রজ্ঞা। স্থিতপ্রজ্ঞা যার মধ্যে পরিদৃশ্য হয় তাঁকে বলা হয় স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির দ্বন্দ্বপূর্ণ সকল বিষয়েরই সমান জ্ঞান হয়। কোনোটির জ্ঞান কম আর কোনোটির জ্ঞান বেশি হয় না। পরস্পরবিরোধী বিষয়গুলি তাঁর কাছে সমান রূপেই প্রতিভাত। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির কাছে তাই সুখদুঃখ, জয়-পরাজয়, শীত-গ্রীষ্ম, লাভ-অলাভ-সমস্ত কিছুই একইভাবে প্রতিভাত হয়। বলা যায় যে, ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন করে কর্মসম্পাদন করলেই নিষ্কাম যোগী তথা স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির রূপ সমত্ব দর্শন হয়। এরূপ সমত্ব দর্শনের ফলে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বই থাকে না এবং তিনি সর্বদা ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকেন। এরূপ ব্যক্তির সর্বদা আনন্দে অবগাহন করেন এবং সর্বদা চিত্তের বুদ্ধিভূমিতে বিরাজ করেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় স্থিতপ্রজ্ঞার লক্ষণে বলা হয়েছে:
প্রজহাতি যদা কামান সর্বান পার্থ মনোগতান।
আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে।। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ২/৫৫)
দ্বিবিধরূপে স্থিতপ্রজ্ঞ
আচার্য শংকর-গীতার ভাষ্যে অবস্থাভেদে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির স্বরূপ দু-ভাবে বর্ণনা করেছেন। অবস্থাভেদে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিকে সমাধিস্থ স্থিতপ্রজ্ঞ এবং ব্যুত্থিত স্থিতপ্রজ্ঞরূপে উল্লেখ করা যায়। কোনো নিষ্কাম যোগী যখন অজ্ঞানের | সঙ্গে কামাদি সকল প্রকার মানসিক বৃত্তিকে পরিত্যাগ করতে সমর্থ হন- তাঁকেই বলা হয় সমাধিস্থ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি। এরূপ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি সমস্তরকম কামনাবাসনাকে মনের ধর্মরূপে অনুধাবন করেন, কখনোই আত্মার স্বরূপরূপে নয়। মনের কামনাগুলি আসে এবং যায়, সেজন্যই মনের ধর্মগুলি অনিত্যরূপে গণ্য। কিন্তু আত্মার স্বরূপ কখনোই অনিত্য নয়, তা হল নিত্য শাশ্বত। যেমন দাহিকা শক্তি হল অগ্নির স্বরূপ এবং তা কখনোই অগ্নি থেকে বিচ্যুত হতে পারে না। তেমনই আত্মার স্বরূপও আত্মা থেকে বিচ্যুত হতে পারে না। সমাধিস্থ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি তাই কামনাবাসনাকে আত্মার স্বরূপ বা ধর্ম নয় বুঝেই এগুলিকে পরিহার করেন। এর ফলে তিনি নিত্যসুখীরূপে আনন্দে মগ্ন থাকেন।